বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

| ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

১০ মাসেও হয়নি কাউন্সিল

কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি কয়েক নেতায় ‘জিম্মি’

এম.এ. আযম, কুড়িগ্রাম 

প্রকাশ: ১৮:৫৫, ১৩ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৩:৪৭, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি কয়েক নেতায় ‘জিম্মি’

দলীয় গঠনতন্ত্র উপেক্ষা, কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য, স্বেচ্ছাচারিতা, সদস্যদের মতামত না নেওয়া এবং স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির কয়েকটি ইউনিট কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে ১২টি ইউনিটের মধ্যে ৮টি উপজেলা ও ৩টি পৌর আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটি নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে অসন্তোষ ও ক্ষোভ। এরই মধ্যে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিল চেয়ে সংবাদ সম্মেলন ও কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এমনকি প্রতিকার চেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আবেদনও করা হয়েছে।

জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, ৯ বছর পর গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির ৫ সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। মোস্তাফিজুর রহমানকে (মোস্তফা) আহ্বায়ক ও সোহেল হোসাইন কায়কোবাদকে সদস্য সচিব করে গঠিত কমিটিতে শফিকুল ইসলাম বেবুকে এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক, হাসিবুর রহমান হাসিবকে দুই নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক এবং তাসভীর উল ইসলামকে সদস্য করা হয়। এরপর গত ৩০ জানুয়ারি কলেবর বৃদ্ধি করে কমিটি ৫১ সদস্যে উন্নীত করে কেন্দ্রীয় বিএনপি।

তারা আরও জানান, বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর নির্দেশনা ছিল উপজেলা কমিটি গঠনে ৫১ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে অথবা সবার সম্মতিক্রমে রেজুলেশন করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করতে হবে। এ ছাড়া কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির ৫১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির সভা হয়। সেই সভায় কমিটির সদস্য বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাইফুর রহমান রানা, সাবেক এমপি উমর ফারুখ এবং কুড়িগ্রাম জেলা চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের পরিচালক মাসুদ রানাসহ বেশ কয়েকজন উপজেলা কমিটি গঠনে তাদের অবস্থান ও কর্মকাণ্ড জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে জানতে চান। কিন্তু তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরবর্তী সময়ে কমিটির সদস্যদের মতামত উপেক্ষা করে ৯ উপজেলা ও ৩ পৌরসভাসহ ১২টি ইউনিটের মধ্যে ১১টিতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ও সদস্য সচিব সোহেল হোসাইন কায়কোবাদের স্বাক্ষরে কমিটি দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে সাবেক এমপি, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বতর্মান জেলা আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য সাইফুর রহমান রানা বলেন, ‌‌‘আমাদের দল গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। ৫১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির মতামত উপেক্ষা করে আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব যে কমিটি দিয়েছেন তা অগণতান্ত্রিক ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী।’

তিনি আরও বলেন, ‘জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান একজন ভারতের নাগরিক। তার এনআইডি কেন বাতিল করা হয়নি, এই মর্মে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। হাইকোর্টের নির্দেশে দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি তার পৈত্রিক নিবাস ভারতে চলে যাবেন ঠিকই, কিন্তু জেলা বিএনপির যে ক্ষতি করে যাবেন—সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নেতাকর্মীদের বেশ বেগ পেতে হবে।’

কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি উমর ফারুখ বলেন, ‘অগণতান্ত্রিক পন্থায় কমিটি দেওয়ায় জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, এমনকি ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (দলকে) চরম মূল্য দিতে হবে। এই আহ্বায়ক কমিটি দ্বারা জেলা কাউন্সিল হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখছি না। তাছাড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি কয়েকজনের হাতে জিম্মি।'

জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক মেয়র আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘গত ২৩ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হওয়ার পর প্রায় ১০ মাস অতিবাহিত হলো, আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব স্বৈরাচারী কায়দায় কমিটি গঠন এবং ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করায় এই কমিটির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে কালো পতাকা মিছিল এবং ইতিমধ্যে প্রায় ২০-এর অধিক সক্রিয় নেতা কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন।’

১০ মাসেও জেলা বিএনপির সম্মেলন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘জেলায় ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭১টি ইউনিয়নের ৬৩৯ ও পৌরসভার ২৭, মোট ৬৬৬টি ওয়ার্ড কমিটির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি। কেন্দ্র থেকে জেলা কাউন্সিলের তাগিদ দেওয়া হলেও বিশেষ করে আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ও সদস্য সচিব সোহেল হোসাইন কায়কোবাদ আমলে নিচ্ছেন না। ফলে জেলা কমিটির কাউন্সিল নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।'

এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘আহ্বায়ক কমিটির ৫১ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠন করতে হবে। উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পূর্বে আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে বিষয়টিতে কেন্দ্র অবশ্যই গঠনতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করত।'

১০ মাস অতিবাহিত হলেও কেন জেলা কাউন্সিল হচ্ছে না জানতে চাইলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা বলেন, 'আমি ব্যস্ত, পরে কথা হবে।'

সম্পর্কিত বিষয়:

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

পুয়ের্তো রিকোর জালে মেসির আর্জেন্টিনার ৬ গোল
স্বাক্ষরবিহীন ব্যালট পেপার বিতর্কে তোলপাড়
চাকসু নির্বাচন অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়ার অভিযোগ
রোম সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস
মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে ৯ জনের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
মিরপুরের আগুন গার্মেন্টসের দ্বিতীয় তলা থেকে ৯ জনের লাশ উদ্ধার
হাসিনাকে ফেরাতে রেড নোটিশ জারির পদক্ষেপ
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ১৯ অক্টোবরের মধ্যে এনিসিপিকে প্রতীক নিতে হবে
শিশুদের জন্য বিপজ্জনক ভারতের ৩ কফ সিরাপ: ডব্লিউএইচও
বুধবার থেকে শুরু অনলাইন জামিননামা প্রক্রিয়া
শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবস্থান
আগামী রবিবার থেকে মাসব্যাপী শিশু-কিশোরদের বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকাদান শুরু