পুরোনো ফ্লপি ডিস্ক উদ্ধার অভিযানে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
স্টিফেন হকিংয়ের চিঠি থেকে ব্রিটিশ রাজনীতিকদের নথি
প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭:১৪, ১১ অক্টোবর ২০২৫

মানব ইতিহাসের অমূল্য দলিলের বড় একটি অংশ আজ লুকিয়ে আছে এমন জায়গায়, যেখানে সাধারণত কেউ আর তাকায় না— পুরোনো ফ্লপি ডিস্কের ভেতর। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কাইভে চলছে এক দৌড়— সময়ের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধ— যাতে হারিয়ে না যায় স্টিফেন হকিংয়ের চিন্তাধারা, ব্রিটিশ রাজনীতিক নীল কিনকের চিঠি কিংবা ৮০–৯০ দশকের বহু অজানা লেখা।
ফ্লপি ডিস্কে বন্দি হকিংয়ের উত্তরাধিকার
বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের দপ্তর থেকে পাওয়া ১১৩ বাক্স নথি ও স্মারকপত্রের সঙ্গে মেলে অসংখ্য পুরোনো ফ্লপি ডিস্ক। এগুলিতে আছে তার লেখা, বক্তৃতা, এমনকি সফটওয়্যার যা তিনি তার বিশেষ যন্ত্রে ব্যবহার করতেন।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফিউচার নস্টালজিয়া প্রজেক্ট’–এর সদস্য লিওন্টিন টালবুম বলেন, “হকিংয়ের ডিস্কগুলোর মধ্যে রয়েছে কিছু চিঠি, কিছু লেকচার, এমনকি কয়েকটি কম্পিউটার গেমও। এগুলো উদ্ধার করা সত্যিই আনন্দের।”
হারিয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল তথ্য
ফ্লপি ডিস্ক দেখতে টেকসই হলেও এর ভেতরের ম্যাগনেটিক স্তর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয়। ফলে একসময় পুরো ডেটাই হারিয়ে যেতে পারে। টালবুম জানান, “যে বই শত বছর আগের, সেটি এখনো পড়া যায়, কিন্তু ফ্লপি পড়তে বিশেষ যন্ত্র লাগে— যেন বই খোলার চাবিই হারিয়ে গেছে।”
এই কারণেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন সম্ভাব্য ‘ডিজিটাল ডার্ক এজ’ বা ডিজিটাল অন্ধযুগ নিয়ে— যেখানে আগামী প্রজন্ম হয়তো আমাদের এই সময়ের তথ্যই আর উদ্ধার করতে পারবে না।
হার্ডওয়্যার নয়, হারিয়ে যাচ্ছে জ্ঞানও
এই প্রকল্পের অন্যতম সদস্য ক্রিস নোলস যুক্তরাজ্যের লেবার নেতা নীল কিনকের পুরোনো আট ইঞ্চি ডিস্ক উদ্ধার করতে গিয়ে বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম শুধু বক্তৃতাই পাবো, কিন্তু তাতে পাওয়া গেল তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে চিঠিপত্রও।”
কিন্তু এমন ডিস্ক পড়তে প্রয়োজন বিরল যন্ত্রপাতি— যেগুলোর অনেকই এখন আর তৈরি হয় না। “আমি আমার আট ইঞ্চির ড্রাইভটি ইবে থেকে কিনেছিলাম। ভাগ্য ভালো, সেটি এখনো কাজ করছে,” বলেন নোলস।
কোড অনুবাদের মতোই কঠিন এই উদ্ধারকাজ
পুরোনো সফটওয়্যার ফরম্যাট থেকে ডেটা পড়া মানে একপ্রকার ভাষান্তর। ইতিহাসবিদ পিটার রিস বলেন, “যেভাবে লাতিন পণ্ডিতেরা প্রাচীন লেখাকে আধুনিক পাঠযোগ্য ভাষায় অনুবাদ করেন, আমরাও ঠিক তেমনই পুরোনো কোডকে পাঠযোগ্য ডেটায় রূপ দিই।”
কিন্তু সমস্যাটা এখানেই— পুরোনো অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যারের তথ্য আজ অনেকটাই বিলুপ্ত। ফলে তথ্য উদ্ধার করা মানে প্রায় গোয়েন্দাগিরি।
সাধারণ মানুষও অংশ নিচ্ছে এই উদ্ধার অভিযানে
৯ অক্টোবর ২০২৫–এ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় একটি ওয়ার্কশপ আয়োজন করে, যেখানে সাধারণ মানুষ তাদের পুরোনো ফ্লপি নিয়ে এসে জানতে পারেন— তাতে কী তথ্য লুকিয়ে আছে। অনেকেই আবিষ্কার করেছেন নিজেদের পরিবারের হারানো চিঠি, ছবি বা ব্যক্তিগত লেখাগুলো।
রিসের মতে, “আজকের ইমেইল বা ক্যালেন্ডারগুলো হয়তো এখন তুচ্ছ মনে হয়, কিন্তু ২০০ বছর পর এগুলিই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে উঠবে।”
সময়ের সঙ্গে দৌড়ে ইতিহাস রক্ষা
লিওন্টিন টালবুম বলেন, “অনেক ফ্লপি ডিস্কের বয়স এখন ৪০–৫০ বছর। এর ম্যাগনেটিক স্তর দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।”
তিনি বিশেষ করে ভালোবাসেন ৫.২৫ ইঞ্চি ফ্লপিগুলো— “সেগুলো একেকটা রহস্যের খনি। লেবেলে যা লেখা, তার ভেতরে থাকতে পারে একেবারে ভিন্ন কিছু।”সূত্র: বিবিসি