জুলাই সনদ: গণভোটের সময় নিয়ে ভিন্নমত
বিএনপি চায় নির্বাচনের দিন, জামায়াত চায় আগে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১:৫৫, ৫ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০০:২৫, ৬ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট আয়োজনের বিষয়ে অবশেষে দেশের সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। তবে গণভোটের সময় ও পদ্ধতি নিয়ে প্রধান দুটি দল—বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী—পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে।
রবিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলা এ বৈঠকে উপস্থিত ছিল দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। আলোচনায় সবাই গণভোটের পক্ষে মত দিলেও সময় ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় মতভেদ দেখা দেয়।
নির্বাচনের দিন গণভোট চায় বিএনপি
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, তাদের দল গণভোটে একমত হলেও সময় নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে।
তিনি বলেন, "আমরা চাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট অনুষ্ঠিত হোক। একই দিনে ভোটাররা সংসদ সদস্য নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দেবেন। এর জন্য আলাদা সাংবিধানিক সংশোধন দরকার নেই; একটি অর্ডিন্যান্স জারি করলেই যথেষ্ট।”
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, "এই অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে রেফারেন্ডাম পরিচালনার এখতিয়ার দেওয়া যেতে পারে। এতে আলাদা ব্যালটে জনগণের মতামত নেওয়া সম্ভব হবে। জনগণের এই রায়ই হবে সার্বভৌম রায়, যা সংসদকে মানতেই হবে।”
বিএনপির এই নেতার মতে, জুলাই সনদটি প্রকাশ্যে জনগণের সামনে তুলে ধরলে সবাই সচেতনভাবে ভোট দিতে পারবেন, এবং রায় ঘোষণার পর সংসদ সেটি বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তবায়ন করবে।
জামায়াত চায় আলাদা দিনে গণভোট
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী মনে করে জাতীয় নির্বাচনের আগে আলাদা দিনে গণভোট আয়োজন করা উচিত।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, "সব দল গণভোটে একমত হলেও আমরা মনে করি, সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট হলে জনগণ বিভ্রান্ত হতে পারেন। ভোটাররা রেফারেন্ডামে অভ্যস্ত নয়। তাই নভেম্বরের শেষ দিকে বা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশন চাইলে আলাদা দিনে গণভোট আয়োজন করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, "গণভোট আগে হয়ে গেলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে কোনো বাধা থাকবে না। এতে জাতি জটিলতা থেকে বাঁচবে, এবং সরকারও জনরায় পাবে।”
জামায়াতের মতে, আগে গণভোট হলে তার ফল সংসদে বা আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে টিকবে না, কারণ এটি সরাসরি জনগণের রায় হিসেবে গণ্য হবে।
বৈঠক শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, "দলগুলোর মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। প্রায় সবাই দলীয় অবস্থান থেকে সরে এসে জাতীয় স্বার্থে একমত হয়েছেন। গণভোট আয়োজনের বিষয়ে সর্বসম্মত মত পাওয়া ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।”
তিনি আরও যোগ করেন, জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গণভোটই সবচেয়ে গণতান্ত্রিক পথ, যা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
এই আলোচনার মধ্য দিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়নের পথে বড় রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে উঠলেও, গণভোটের সময় নির্ধারণ এখন মূল বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে।
বিএনপি চায় একই দিনে দ্বৈত ভোট আয়োজন, আর জামায়াত চায় আগেভাগে আলাদা দিন নির্ধারণ। এখন দেখার বিষয়, নির্বাচন কমিশন ও সরকার কোন প্রস্তাবের দিকে ঝুঁকে পড়ে—একদিনে ‘দ্বৈত ভোট’ নাকি আলাদা দিনে ‘বিশুদ্ধ গণভোট’।