বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা নীতি কঠোর করছে ডেনমার্ক
বিশেষ প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯:৪৩, ১ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিষা নীতি কঠোর করছে ডেনমার্ক। শিক্ষা ভিসা নিয়ে চাকরির বাজারে প্রবেশের গোপন পথ হিসেবে ব্যবহার ঠেকাতেেএই কড়াকড়ি করা হচ্ছে বলে ডেনমার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ডেনমার্কের অভিবাসন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ১৯ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সরকার “শিক্ষা ভিসা অপব্যবহার ঠেকাতে উদ্যোগ নিচ্ছে।” এই উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশ ও নেপালের মতো দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য যথাযথ একাডেমিক যোগ্যতা ছাড়া ডেনমার্কের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আনার সুযোগ সীমিত করা হবে এবং পড়াশোনা শেষে কাজের অনুমতি তিন বছর থেকে কমিয়ে এক বছরে আনা হবে।
ডেনমার্কে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পর কপেনহেগেনে বাংলাদেশ দূতাবাস ২৫ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতি দেয়। এতে বলা হয়, দূতাবাস সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত রয়েছে। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং চেষ্টা করছে যাতে ডেনমার্কে বর্তমানে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা কোনো সমস্যা বা বৈষম্যের মুখোমুখি না হয়।
সাবেক অভিবাসন মন্ত্রী কায়ারে ডিউবভাদ বেক এই সিদ্ধান্ত দেন। র্যাজমুস স্টক্লুন্ড এক বিবৃতিতে বলেন—
“দুঃখজনকভাবে পাঠ্যক্রমকে ডেনিশ শ্রমবাজারে ঢোকার পেছনের দরজা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা এখন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে আসা শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারের সংখ্যায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা জানি এই দুই দেশের শিক্ষার্থীদের বাদ পড়ার হার অন্যান্য বিদেশিদের তুলনায় বেশি এবং তাদের একাডেমিক ও ভাষাগত দক্ষতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একই সঙ্গে তারা অন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের তুলনায় অনেক বেশি কাজ করে, যার বড় অংশই অদক্ষ শ্রম। অথচ পাঠ্যক্রমে আসার মূল উদ্দেশ্য অবশ্যই পড়াশোনা হওয়া উচিত।”
অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে চীনা শিক্ষার্থীদের মাত্র এক শতাংশ ও মার্কিন শিক্ষার্থীদের দুই শতাংশ রেসিডেন্স পারমিট পরিবারের সঙ্গে যুক্ত ছিল। বিপরীতে নেপালি ও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই হার যথাক্রমে ৭৪ শতাংশ ও ৫৮ শতাংশ।
ডেনমার্কের উচ্চশিক্ষা ও বিজ্ঞানমন্ত্রী ক্রিস্টিনা এগেলুন্ডের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা যায়, যেটি আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেপালি ও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা হয়েছিল, সেখানে আরহুস বিশ্ববিদ্যালয়—যেখানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—জানায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীকে “পড়াশোনামুখী মনে হয় না” এবং তাদের উদ্দেশ্য যেন ডেনমার্কে থাকা।
সমীক্ষায় আরও উঠে আসে যে, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে আরহুসে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষে বাদ পড়ার হার ছিল ১৩ শতাংশ, যেখানে অন্যান্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তা মাত্র ৪ শতাংশ। পরীক্ষায় নিবন্ধন করলেও ১৪ থেকে ২৫ শতাংশ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অংশ নেয়নি, যেখানে অন্যদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ৫ থেকে ৬ শতাংশ। আর পাসের হার ছিল ৫৫ থেকে ৬৫ শতাংশ—যা অন্য দেশগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশ সাফল্যের তুলনায় অনেক কম।
১৯ সেপ্টেম্বরের বিজ্ঞপ্তিতে এগেলুন্ড বলেন—“শিক্ষা অবস্থান তাদের জন্য হওয়া উচিত যারা পড়াশোনা করতে চায়। যারা নিয়ম অপব্যবহার করে ডেনিশ শ্রমবাজারে ঢুকতে চায় তাদের জন্য নয়। আমাদের শিক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা প্রতিবছর মেধাবী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের দেশে আনি, যা বড় অর্জন—এটি আমরা অপচয় করতে পারি না। তাই আমরা প্রতারণা ঠেকাতে লক্ষ্যভিত্তিক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের উদ্যোগ দৃঢ় জ্ঞানের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে এবং আমরা সেখানে হস্তক্ষেপ করছি যেখানে তা গুরুত্বপূর্ণ—সব মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্য দরজা একেবারে বন্ধ না করেই।”