বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

| ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

গোপন সামরিক মিশনের আড়ালে টাইটানিকের সন্ধান

বব ব্যালার্ডের ঐতিহাসিক আবিষ্কারের ৪০ বছর পর উন্মোচিত রহস্য

বিজ্ঞান ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭:২৪, ৮ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৫:৩৫, ৯ অক্টোবর ২০২৫

বব ব্যালার্ডের ঐতিহাসিক আবিষ্কারের ৪০ বছর পর উন্মোচিত রহস্য

১৯৮৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর, উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরে চলছিল এক অবিশ্বাস্য অনুসন্ধান। মার্কিন বিজ্ঞানী ও অভিযাত্রী রবার্ট (বব) ব্যালার্ড এবং তার দল খুঁজছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত জাহাজডুবির— টাইটানিক। কিন্তু সেই অনুসন্ধানের আড়ালেই লুকিয়ে ছিল এক শীর্ষ গোপন সামরিক অভিযান।

ব্যালার্ড তখন কাজ করছিলেন মার্কিন নৌবাহিনীর সঙ্গে। তার প্রকৃত দায়িত্ব ছিল ১৯৬০-এর দশকে ডুবে যাওয়া দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন — USS Thresher ও USS Scorpion—এর অবস্থান নির্ধারণ করা। টাইটানিকের অনুসন্ধান আসলে ছিল সেই মিশনের “কভার স্টোরি”।

ব্যালার্ড নিজেই পরে বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম সোভিয়েতরা যেন না জানে, আমরা কোথায় পারমাণবিক সাবমেরিনের ধ্বংসাবশেষ খুঁজছি।”

অবিশ্বাস্য মুহূর্ত: টাইটানিকের বয়লার দেখা

সেই অভিযানের সময় এক ভোরে গবেষণা জাহাজ Knorr-এর মনিটরে দেখা যায় এক ধাতব সিলিন্ডারের ছায়া। ধারণা করা হয়, এটি টাইটানিকের বয়লার। তখনই ব্যালার্ডকে ডেকে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, “আমি তখনো ঘুমাতে যাইনি। ডাকে শুনেই পাজামার ওপর ফ্লাইট স্যুট পরে ছুটে যাই। তারপর কয়েকদিন সেটাই পরে ছিলাম!”

কিছুক্ষণ পরেই নিশ্চিত হয়—সেটি আসলেই টাইটানিক। পরের মুহূর্তেই “সবাই যেন পাগল হয়ে গিয়েছিল,” স্মরণ করেন ব্যালার্ড।

‘রাস্টিকলস’: এক নতুন শব্দের জন্ম

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ প্রথমবার ভিডিওতে ধারণ করা হয় Argo নামের রিমোট-কন্ট্রোল যান ব্যবহার করে। পরের বছর, উন্নত রঙিন ক্যামেরা নিয়ে ফের যান ব্যালার্ড। সেখানেই তিনি লক্ষ্য করেন জাহাজের গায়ে ঝুলে থাকা লালচে-বাদামি রঙের স্পাইকগুলো, যা ধাতু-খেকো ব্যাকটেরিয়ার কাজ। ব্যালার্ড এগুলোর নাম দেন “Rusticles”, যা পরবর্তীতে অক্সফোর্ড অভিধানেও স্থান পায়।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিপ্লব

ব্যালার্ডের প্রযুক্তি ও কৌশল শুধু টাইটানিকই খুঁজে দেয়নি, বরং গভীর সমুদ্র অনুসন্ধানে এনে দেয় বিপ্লব। এই মিশনের মাধ্যমেই প্রথম প্রমাণ মেলে প্লেট টেকটনিকস তত্ত্বের বাস্তবতার, এবং আবিষ্কৃত হয় হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট—যেখানে সূর্যালোক ছাড়াই প্রাণ বেঁচে থাকতে পারে। এই আবিষ্কার জীবন উৎপত্তি সম্পর্কেও নতুন চিন্তার দুয়ার খুলে দেয়।

অন্যসব মহাকাব্যিক আবিষ্কার

টাইটানিকের পর ব্যালার্ড আবিষ্কার করেন নাৎসি যুদ্ধজাহাজ বিসমার্ক, মার্কিন বিমানবাহী রণতরী USS Yorktown, এবং প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডির কমান্ড করা নৌযান PT-109। তবে ২০১৯ সালে অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্টের হারানো বিমান খুঁজে পাননি — সেটি আজও তার “চেকলিস্টে” রয়ে গেছে।

এখনও সক্রিয় অভিযাত্রী

৮৩ বছর বয়সেও থেমে যাননি বব ব্যালার্ড। ২০২৫ সালের জুলাইয়ে তিনি ফের নামেন প্রশান্ত মহাসাগরে, Solomon Islands-এর উপকূলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পাঁচটি নৌযুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ মানচিত্রায়ণের মিশনে।

ব্যালার্ড বলেন, “আমি চাই পরবর্তী প্রজন্মের অনুসন্ধানকারীদের জন্য রহস্য রেখে যেতে, কিন্তু আমি জানি—সমুদ্রের এখনো অসংখ্য রহস্য অপেক্ষা করছে।”

সূত্র : সিএনএন

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

সন্ধ্যায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা
সন্ধ্যায় ‘অতি জরুরি’ বৈঠকে বসছে ঐকমত্য কমিশন
আমি নিজেই পিআর বুঝি না : মির্জা ফখরুল
অক্টোবরে বাড়ছে ট্রিপ সংখ্যা রবিবার থেকে ১ ঘন্টা বেশি চলবে মেট্রোরেল
সব রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে সই করবে : আইন উপদেষ্টা
ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ অবরোধ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের
পুয়ের্তো রিকোর জালে মেসির আর্জেন্টিনার ৬ গোল
স্বাক্ষরবিহীন ব্যালট পেপার বিতর্কে তোলপাড়
চাকসু নির্বাচন অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়ার অভিযোগ
রোম সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস
মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে ৯ জনের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
মিরপুরের আগুন গার্মেন্টসের দ্বিতীয় তলা থেকে ৯ জনের লাশ উদ্ধার
হাসিনাকে ফেরাতে রেড নোটিশ জারির পদক্ষেপ
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ১৯ অক্টোবরের মধ্যে এনিসিপিকে প্রতীক নিতে হবে
শিশুদের জন্য বিপজ্জনক ভারতের ৩ কফ সিরাপ : ডব্লিউএইচও
আগামী রবিবার থেকে মাসব্যাপী শিশু-কিশোরদের বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকাদান শুরু