বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

| ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

যুক্তরাজ্যের ’গ্লোবাল টিপিং পয়েন্টস রিপোর্ট ২০২৫’ 

ধ্বংসের মুখে প্রবালপ্রাচীর, বিজ্ঞানীদের চূড়ান্ত সতর্কতা

প্রকাশ: ১৩:৫১, ১৩ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৩:৫৪, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

ধ্বংসের মুখে প্রবালপ্রাচীর, বিজ্ঞানীদের চূড়ান্ত সতর্কতা

গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের কারণে পৃথিবী এখন প্রথম “বিপর্যয়কর টিপিং পয়েন্ট” এ পৌঁছেছে। এতে উষ্ণ পানির প্রবালপ্রাচীরগুলো দীর্ঘমেয়াদী অবক্ষয়ের মুখে পড়েছে এবং কোটি মানুষের জীবিকা ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) প্রকাশিত ’গ্লোবাল টিপিং পয়েন্টস রিপোর্ট ২০২৫’ শীর্ষক নতুন এক বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদনে এই সতর্ক করা হয়েছে। এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপক টিম লেন্টন ও যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটার এর গ্লোবাল সিস্টেম ইনস্টিটিউট। এতে ২৩টি দেশের ৮৭টি প্রতিষ্ঠানের ১৬০ জন বিজ্ঞানী অংশ নেন এবং এটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় প্রকাশিত হয়েছে। অ্যামাজনের মালিক জেফ বেজোস অর্থায়ন করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী উষ্ণমণ্ডলীয় প্রবালপ্রাচীরগুলো এক ভয়াবহ সীমা অতিক্রম করেছে, এখন সেখান থেকে আর ফেরার পথ নেই। কারণ, সমুদ্রের তাপমাত্রা এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যেখানে অধিকাংশ প্রবালের টিকে থাকা আর সম্ভব নয়। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, উষ্ণ পানিতে দীর্ঘ সময় থাকায় প্রবালগুলো তাদের রং ও খাদ্যের উৎস হারাচ্ছে। একবার রং হারালে (ব্লিচিং হলে) তারা আর সহজে ফিরে আসে না। যদি সমুদ্র দ্রুত ঠান্ডা না হয়, প্রবাল ধীরে ধীরে মৃত ও ভঙ্গুর কঙ্কালে পরিণত হয়।

২০২৩ সালের পর থেকে প্রশান্ত, ভারত ও আটলান্টিক মহাসাগরে অভূতপূর্ব পরিমাণ প্রবালমৃত্যু লক্ষ্য করেছেন গবেষকেরা। এখন সমুদ্রের নিচে দেখা যাচ্ছে ভয়ঙ্কর সাদা প্রবালপ্রাচীর—যেন এক ভূতুড়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য।

বিজ্ঞানীরা আরও বলছেন, প্রবালপ্রাচীর পুরোপুরি হারিয়ে যাবে না, তবে তা রূপান্তরিত হবে এক কম বৈচিত্র্যপূর্ণ বাস্তুব্যবস্থায়। সেখানে অ্যালজি ও স্পঞ্জের মতো উষ্ণতাসহনশীল প্রাণী আধিপত্য করবে। মৃত প্রবালের কঙ্কাল ধীরে ধীরে ভেঙে যাবে, আর সমুদ্রতল পরিণত হবে ধ্বংসস্তূপে।

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিশ্বের প্রায় ১০ লাখ সামুদ্রিক প্রজাতি ও লাখো মানুষের জীবিকা সরাসরি নির্ভরশীল প্রবালপ্রাচীরের ওপর। এই বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংস মানে খাদ্যচক্র ও অর্থনীতির ভয়াবহ বিপর্যয়।

এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পৃথিবী এখন ’আমাজন অরণ্যের ধ্বংস, মহাসাগরের স্রোতব্যবস্থার ভাঙন এবং বরফস্তরের বিলুপ্তি’র মতো আরও কয়েকটি টিপিং পয়েন্টের কাছাকাছি রয়েছে।

তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, প্রবালপ্রাচীর এখনো কিছুটা টিকে থাকতে পারে, যদিও তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটারের গ্লোবাল সিস্টেমস ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর টিম লেন্টন বলেন, “আমরা আর টিপিং পয়েন্ট নিয়ে ভবিষ্যতের কথা বলছি না। উষ্ণ পানির প্রবালপ্রাচীর ধ্বংস এখন বাস্তবতা।”

তিনি আরও জানান, ক্যারিবীয় অঞ্চলে প্রবালপ্রাচীরগুলো ইতিমধ্যে ভয়াবহ তাপপ্রবাহ, বৈচিত্র্যহীনতা ও রোগব্যাধির কারণে “ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে” পৌঁছেছে।

’গ্লোবাল টিপিং পয়েন্টস রিপোর্ট’–এর হিসাব অনুযায়ী, প্রবালপ্রাচীর ধ্বংস হয় যখন পৃথিবীর তাপমাত্রা শিল্পপূর্ব সময়ের তুলনায় ১°C থেকে ১.৫°C বেড়ে যায়— যার গড় মান ১.২°C। বর্তমানে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রায় ১.৪°C বেড়েছে। যদি দ্রুত ও কার্যকরভাবে কার্বন নির্গমন না কমানো হয়, তাহলে ১.৫°C সীমা অতিক্রম করতে আর ১০ বছরও লাগবে না।

বিজ্ঞানীরা জানান, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে পৃথিবী জুড়ে চলছে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রবাল ফ্যাকাশে হওয়ার ঘটনা। ৮০টিরও বেশি দেশের প্রবালপ্রাচীর চরম সমুদ্র তাপমাত্রার কারণে প্রভাবিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, “এই ঘটনাটি আমাদের অজানা অঞ্চলে ঠেলে দিয়েছে।”

অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের প্রবালবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক পিটার মামবি বলেন, ”আমি একমত যে প্রবালপ্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত, তবে নতুন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে কিছু প্রবাল হয়তো ২°C তাপমাত্রাতেও টিকে থাকতে পারে।” তিনি সতর্ক করেন, যদি মানুষ মনে করে প্রবালপ্রাচীর আর বাঁচানো সম্ভব নয়, তাহলে সমাজ ’হাল ছেড়ে দেবে’, যা ভয়াবহ ভুল হবে।

আন্তর্জাতিক প্রবালপ্রাচীর সমিতির সহসভাপতি ড. ট্রেসি আইন্সওর্থ বলেন, “প্রবালপ্রাচীর এখন রূপান্তরের পথে। এগুলোর কাঠামো ও বৈচিত্র্য বদলে যাচ্ছে। আমাদের কাজ এখন বুঝে নেওয়া, কীভাবে এই নতুন বাস্তুব্যবস্থাগুলো টিকে থাকতে পারে।”

অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স জানিয়েছে, বৈশ্বিক পরিসংখ্যান ব্যাখ্যা করার সময় আঞ্চলিক বৈচিত্র্য মাথায় রাখতে হবে, কারণ সব জায়গায় পরিস্থিতি একরকম নয়।

প্রফেসর লেন্টন সতর্ক করেন, “পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকা ও গ্রিনল্যান্ডের বরফস্তর দ্রুত গলে যাচ্ছে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়াচ্ছে। আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ১.৫°C অতিক্রম করব, যা আরও ভয়াবহ টিপিং পয়েন্টের ঝুঁকি তৈরি করবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাজন বনও ভাবনার চেয়েও দ্রুত বিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছে।”

রিপোর্টে বলা হয়, “পজিটিভ টিপিং পয়েন্ট”–এর সম্ভাবনাও আছে—যেমন বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানিতে দ্রুত রূপান্তর ইত্যাদি। এগুলো দ্রুত ঘটলে কার্বন নির্গমন কমাতে সাহায্য করবে।

প্রফেসর লেন্টন বলেন, “এখন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে—আমরা কি আগে ইতিবাচক টিপিং পয়েন্টে পৌঁছাতে পারব, নাকি ভয়াবহ বিপর্যয়ের আগে?”

প্রতিবেদনের সহলেখক এবং যুক্তরাজ্যের ‘ওয়ার্লড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার’ (ডব্লিউডব্লিউএফ) এর প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ড. মাইক ব্যারেট বলেন, “এখনই সংরক্ষণ প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। খেলার নিয়ম বদলে গেছে, তাই প্রতিক্রিয়াও হতে হবে দ্রুত ও শক্তিশালী।”

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

পুয়ের্তো রিকোর জালে মেসির আর্জেন্টিনার ৬ গোল
স্বাক্ষরবিহীন ব্যালট পেপার বিতর্কে তোলপাড়
চাকসু নির্বাচন অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়ার অভিযোগ
রোম সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস
মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে ৯ জনের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
মিরপুরের আগুন গার্মেন্টসের দ্বিতীয় তলা থেকে ৯ জনের লাশ উদ্ধার
হাসিনাকে ফেরাতে রেড নোটিশ জারির পদক্ষেপ
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ১৯ অক্টোবরের মধ্যে এনিসিপিকে প্রতীক নিতে হবে
শিশুদের জন্য বিপজ্জনক ভারতের ৩ কফ সিরাপ: ডব্লিউএইচও
বুধবার থেকে শুরু অনলাইন জামিননামা প্রক্রিয়া
শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবস্থান
আগামী রবিবার থেকে মাসব্যাপী শিশু-কিশোরদের বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকাদান শুরু