অর্ধেক পুরুষ, অর্ধেক নারী!
থাইল্যান্ডের জঙ্গলে ‘ডামারকাস ইনাজুমা’
বিজ্ঞান ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭:৪১, ৯ অক্টোবর ২০২৫

থাইল্যান্ডের কাঞ্চনাবুরি প্রদেশের ঘন জঙ্গলে নতুন এক প্রজাতির গর্তবাসী মাকড়সার সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু চমক এখানেই শেষ নয়—এই মাকড়সার শরীরের এক দিক পুরুষ, আরেক দিক নারী! বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘বাইল্যাটেরাল গাইনান্ড্রোমর্ফিজম’, যেখানে একই প্রাণীর শরীরে পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ের বৈশিষ্ট্য একসঙ্গে দেখা যায়।
এই বিরল জীববৈজ্ঞানিক ঘটনা এতটাই ব্যতিক্রমী যে, চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘরের গবেষকেরা একে জীববিজ্ঞানের “নতুন দিগন্ত” বলে অভিহিত করেছেন।
‘উইশবোন স্পাইডার’ পরিবারের নতুন সদস্য
নতুন প্রজাতিটি ‘ডামারকাস’ গণভুক্ত, যাদের ইংরেজিতে ডাকা হয় ‘উইশবোন স্পাইডার’, কারণ তারা ইংরেজি ওয়াই (‘Y’) অক্ষরের মতো গর্ত তৈরি করে। সদ্য আবিষ্কৃত এই মাকড়সার বাম দিক স্ত্রী ও ডান দিক পুরুষ বৈশিষ্ট্যযুক্ত — এই প্রজাতিতে এমন ঘটনার নজির আগে কখনও পাওয়া যায়নি।
এই নতুন মাকড়সার নাম রাখা হয়েছে ‘ডামারকাস ইনাজুমা’, এক জাপানি মাঙ্গা চরিত্রের নাম অনুসারে, যে নিজের লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারত।
আকার, রঙ ও লিঙ্গের বিভাজন
গবেষকরা জানিয়েছেন, পুরুষ মাকড়সা আকারে ছোট (প্রায় ০.৬ ইঞ্চি) এবং ফ্যাকাশে ধূসর রঙের, অন্যদিকে স্ত্রী মাকড়সা বড় (প্রায় এক ইঞ্চি) ও কমলা আভাযুক্ত। ‘ইনাজুমা’ মাকড়সার শরীরে এই দুই রঙ একসঙ্গে দেখা যায়—একদিক পুরুষের মতো ধূসর, আরেকদিক স্ত্রীর মতো উজ্জ্বল কমলা। যেন প্রকৃতির তৈরি এক জীবন্ত আয়না!
রহস্যময় জেনেটিক গঠন ও সম্ভাব্য কারণ
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ভ্রূণ গঠনের প্রাথমিক ধাপে যৌন ক্রোমোজোম বিভাজনের ত্রুটির কারণেই এই অবস্থা তৈরি হয়। এছাড়াও পরিবেশ, ভাইরাস বা পরজীবীর প্রভাবও এ ধরনের গঠন ঘটাতে পারে।
এটি কেবল মাকড়সার জিনতত্ত্ব নয়, সমগ্র অ্যারাকনিড পরিবারের বিবর্তন বোঝার ক্ষেত্রেও নতুন অধ্যায় খুলে দিয়েছে।
বিষাক্ত কি না, জানা যায়নি এখনো
যদিও এই নতুন প্রজাতির বিষ নিয়ে এখনো কোনো গবেষণা হয়নি, তবুও এদের নিকটাত্মীয় প্রজাতিরা বিষগ্রন্থিযুক্ত। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, হুমকি পেলে এরা বিষদাঁত বার করে আত্মরক্ষায় তেড়ে আসে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, ‘ডামারকাস ইনাজুমা’ হয়তো বিষাক্ত প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত।
প্রকৃতির অজানা দিগন্ত
এই আবিষ্কার শুধু থাইল্যান্ড নয়, গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জীববৈচিত্র্যকে নতুন করে আলোচনায় এনেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন এক মাকড়সার সন্ধান প্রমাণ করে—জঙ্গলের গভীরে এখনো অগণিত অজানা প্রাণ প্রজাতি লুকিয়ে আছে, যাদের সন্ধানই মানবজাতির পরবর্তী বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সূত্র হতে পারে।
‘অর্ধেক নর, অর্ধেক নারী’ এই মাকড়সাটি হয়তো প্রজননে সক্ষম নয়, কিন্তু এর উপস্থিতি বিজ্ঞানীদের সামনে এক নতুন গবেষণার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
প্রকৃতি আবারও মনে করিয়ে দিল—তার রহস্যের শেষ নেই।