শুধু মস্তিষ্ক নয়, শরীরের কোষেও থাকে স্মৃতি
বিজ্ঞান ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩:০২, ১১ অক্টোবর ২০২৫

আমরা এতদিন ভেবেছি, শেখা ও মনে রাখার কাজ কেবল মস্তিষ্কেরই দায়িত্ব। কিন্তু সাম্প্রতিক এক যুগান্তকারী গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য—শুধু মস্তিষ্ক নয়, মানুষের শরীরের সাধারণ কোষও নাকি ‘স্মৃতি’ ধারণ করতে পারে!
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানিয়েছেন, শরীরের নন-নিউরাল বা অমস্তিষ্কীয় কোষও নির্দিষ্ট ব্যবধান রেখে পাঠানো সংকেত মনে রাখতে সক্ষম। অর্থাৎ, শেখার যে নীতি মস্তিষ্কে কাজ করে, সেটিই জীবনের ক্ষুদ্রতম স্তর—কোষেও একইভাবে কার্যকর।
গবেষক দলটি পরীক্ষাগারে মানবদেহের কোষ তৈরি করে তাতে একটি বিশেষ ‘রিপোর্টার জিন’ যুক্ত করেন। এই জিন সক্রিয় হলে কোষে আলো জ্বলে ওঠে—ফলে বোঝা যায় কোষটি কোনো প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে কি না। এরপর তারা রাসায়নিক সংকেত দিয়ে ‘শেখার’ মতো একটি পরিবেশ সৃষ্টি করেন।
ফলাফল ছিল অবাক করার মতো—একটানা সংকেত পেলে কোষের প্রতিক্রিয়া তুলনামূলক কম ছিল, কিন্তু নির্দিষ্ট বিরতিতে সংকেত পাঠালে প্রতিক্রিয়া অনেক তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এই শেখার প্রক্রিয়ায় দুটি প্রোটিন—ইআরকে ও সিআরইবি —গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা মস্তিষ্কে স্মৃতি ও শেখার প্রক্রিয়াতেও একইভাবে কাজ করে। যখন এই প্রোটিনগুলোর কার্যকারিতা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখন কোষগুলোর শেখার ক্ষমতাও সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে যায়।
গবেষকদের মতে, এই ফলাফল জীববিজ্ঞানের এক মৌলিক সত্য প্রকাশ করছে—স্মৃতি শুধু নিউরনের নয়, জীবনেরই অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য।
গবেষকরা বলছেন, এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। বর্তমানে ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে যেখানে মাত্রার ওপর জোর দেওয়া হয়, ভবিষ্যতে হয়তো ওষুধের সময় ও বিরতি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। অর্থাৎ, কম ডোজ দিয়েও দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়া যেতে পারে।
গবেষণার প্রধান বিজ্ঞানীর ভাষায়, “এই গবেষণা প্রমাণ করে যে শেখা ও স্মৃতি শুধু মস্তিষ্কের ক্ষমতা নয়, বরং জীবনের প্রতিটি স্তরের নিজস্ব গুণ।”
অর্থাৎ, আমরা যেমন বিরতি দিয়ে পড়লে ভালো মনে রাখতে পারি, তেমনই শরীরের কোষও সময়ের ব্যবধান চিনে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এই আবিষ্কার মানবদেহ ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ ভাবনায় নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।