ডরসেট উপকূলে ‘তরবারি ড্রাগন’
নতুন এক সামুদ্রিক প্রজাতির জীবাশ্ম আবিষ্কার
বিজ্ঞান ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯:৪৩, ১০ অক্টোবর ২০২৫

ব্রিটেনের ডরসেট উপকূলে পাওয়া এক প্রায় সম্পূর্ণ জীবাশ্মকে শনাক্ত করা হয়েছে নতুন এক প্রাগৈতিহাসিক সামুদ্রিক সরীসৃপ প্রজাতি হিসেবে। বিজ্ঞানীরা একে নাম দিয়েছেন “Xiphodracon goldencapensis” বা ‘ডরসেটের তরবারি ড্রাগন’। এটি এখন পর্যন্ত পাওয়া একমাত্র পরিচিত নমুনা, যা প্রায় ১৮ কোটি ৫০ লাখ বছর আগে জুরাসিক যুগে সমুদ্রের গভীরে বিচরণ করত।
বিজ্ঞানীদের নতুন চমক: “সমুদ্রের তরবারি ড্রাগন”
ডলফিন আকৃতির এই ইকথিওসোর প্রজাতির কঙ্কাল আবিষ্কার করেন ডরসেটের বিখ্যাত জীবাশ্ম শিকারি ক্রিস মুর। তিনি ২০০১ সালে গোল্ডেন ক্যাপ এলাকায় ঝড়ের পর খাড়া পাহাড়চূড়া থেকে জীবাশ্মটি উদ্ধার করেন। পরে এটি কানাডার রয়্যাল অন্টারিও মিউজিয়াম–এ সংরক্ষিত হয়। ১৫ বছর ধরে বিশ্লেষণ শেষে সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণাপত্রে একে নতুন প্রজাতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
সহ-গবেষক ও ইকথিওসোর বিশেষজ্ঞ ড. ডিন লোম্যাক্স বলেন,“Xiphodracon শব্দের অর্থ ‘তরবারি-সদৃশ ড্রাগন’। এর মুখ এতটাই লম্বা ও ধারালো যে তরবারির মতো মনে হয়। ইকথিওসোরদের ২০০ বছর ধরে ‘সামুদ্রিক ড্রাগন’ বলা হয়—তাই নামটি একদম মানানসই।”
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই ‘তরবারি ড্রাগন’-এর লম্বা মুখে অসংখ্য ধারালো দাঁত এবং বিশাল চোখের গহ্বর ছিল, যা তাকে গভীর সমুদ্রে শিকার করতে সাহায্য করত। এর দেহের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় তিন মিটার। সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক হলো, নাসারন্ধ্রের কাছে পাওয়া একটি কাঁটাযুক্ত হাড়, যা অন্য কোনো ইকথিওসোর প্রজাতিতে দেখা যায়নি।
সহ-গবেষক ড. এরিন ম্যাক্সওয়েল বলেন,“এ প্রাণীটির অঙ্গ ও দাঁতের গঠনে বিকৃতি দেখা গেছে, যা ইঙ্গিত দেয় জীবিত অবস্থায়ই এটি গুরুতর আঘাত বা রোগে আক্রান্ত ছিল। খুলিতে পাওয়া কামড়ের দাগ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, এটি সম্ভবত বড় কোনো ইকথিওসোরের আক্রমণে নিহত হয়েছিল। মেসোজোয়িক যুগের সমুদ্র ছিল নিঃসন্দেহে ভয়ংকর।”
ডরসেটের জুরাসিক উপকূল আগে থেকেই জীবাশ্মপ্রেমীদের কাছে বিশ্বখ্যাত—উনিশ শতকের শুরুতে বিখ্যাত জীবাশ্মবিদ মেরি অ্যানিং এখান থেকেই প্রথম ইকথিওসোরের জীবাশ্ম খুঁজে পান। নতুন এই আবিষ্কার সেই ঐতিহ্যেরই ধারাবাহিকতা।
ড. লোম্যাক্স বলেন,“জুরাসিক যুগের এই সময়ের ইকথিওসোর ফসিল অত্যন্ত বিরল। ‘তরবারি ড্রাগন’ সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছে। এটি ইকথিওসোরের বিবর্তন ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ।”
আবিষ্কারক ক্রিস মুর বলেন,“আমি হয়তো আমার নিজের ইকথিওসোর ট্রাম্পেট বাজাচ্ছি, কিন্তু আমি বেশ কয়েকটা পেয়েছি। এর মধ্যে কয়েকটি এখন নতুন প্রজাতি হিসেবে স্বীকৃত।”
নতুন এই সাফল্য উদযাপন প্রসঙ্গে তিনি মজা করে বলেন,“চ্যাম্পেন খুলব, নাকি এক কাপ চা খাব—এখনও ঠিক করিনি!”
সূত্র : বিবিসি ও রয়্যাল অন্টারিও মিউজিয়াম গবেষণা প্রতিবেদন