বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

| ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

বিষাক্ত অস্ত্রের বুকে প্রাণের উচ্ছ্বাস

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফেলে দেওয়া জাহাজ-অস্ত্রে ফুলে ফেঁপে উঠছে সাগরজীবন

সমাজকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭:৩০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিষাক্ত অস্ত্রের বুকে প্রাণের উচ্ছ্বাস

ছবি : সংগৃহীত

বাল্টিক সাগরের লুবেক উপসাগরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফেলে দেওয়া মারাত্মক অস্ত্র ও বোমার গায়ে আজ লেগে আছে প্রাণের ছোঁয়া। ইউরোপীয় সবুজ কাঁকড়া, আটলান্টিক কড মাছ, সি-অ্যানিমোন, কৃমি আর তারামাছের মতো অসংখ্য সামুদ্রিক প্রাণী বোমার গায়ে তৈরি করেছে রঙিন জীববৈচিত্র্যের আস্তানা।


শূন্য সমুদ্রতলের তুলনায় মিউনিশনের গায়ে প্রাণের আধিক্য প্রায় পাঁচগুণ বেশি। গবেষকরা দেখেছেন—প্রতি বর্গমিটারে গড়ে ৪৩ হাজার জীব এই অস্ত্রের ধাতব গায়ে বসতি গড়েছে, যেখানে সমুদ্রতলের বালুময় মাটিতে সেই সংখ্যা মাত্র ৮,২০০।


বিস্ফোরক পদার্থের ভেতরে থাকা টিএনটি আর আরডিএক্স রাসায়নিকের মাত্রা প্রাণঘাতী হলেও প্রাণীরা মূলত অস্ত্রের ধাতব আবরণের বাইরের অংশেই থাকে। এর ফলে তারা সরাসরি বিষাক্ত সংস্পর্শ এড়িয়ে তুলনামূলক নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায়।


গবেষকরা বলছেন, শক্ত ধাতব পৃষ্ঠ জীবদের এমন টেকসই আশ্রয় দেয়, যা বালুকাময় তলদেশ দিতে পারে না। ঝুঁকির মাঝেও বেঁচে থাকার এই কৌশল প্রকৃতির অভিযোজন ক্ষমতারই নিদর্শন।


১৯৭২ সালের লন্ডন কনভেনশন অন দ্য প্রিভেনশন অব মেরিন পলিউশন কার্যকর হওয়ার আগে, অব্যবহৃত বিষাক্ত বিস্ফোরক অস্ত্রগুলো প্রায়শই সমুদ্রে ফেলা হতো।
এই অস্ত্রগুলোতে এমন সব রাসায়নিক পদার্থ ছিল, যেগুলো সামুদ্রিক জীবনের জন্য অত্যন্ত বিষাক্ত বলে বিবেচিত। তবে তাদের শক্ত ধাতব আবরণ বিভিন্ন জীবের বসবাসের জন্য উপযুক্ত পৃষ্ঠ সরবরাহ করত।


সর্বশেষ গবেষণায় ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে বাল্টিক সাগরের লিউবেক উপসাগরে একটি নতুন অস্ত্রভান্ডার ফেলার স্থান অনুসন্ধানে সাবমার্সিবল ড্রোন ব্যবহার করা হয়।


গবেষকেরা সেখানে ফেলে রাখা অস্ত্রের ভিডিও ধারণ করেন এবং সাইট থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করেন। পাশাপাশি তুলনার জন্য আশপাশের দুইটি এলাকার তলানির নমুনাও পরীক্ষা করা হয়।


সেই অস্ত্রগুলোর মধ্যে ছিল ভি-১ ফ্লাইং বোম্বের ওয়ারহেড, যা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির ব্যবহৃত প্রাথমিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের একটি ধরন।
শুধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অস্ত্র নয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের পোটোম্যাক নদীর “Ghost Fleet” নামের ডুবন্ত জাহাজগুলোও আজ হয়ে উঠেছে নতুন ইকোসিস্টেম। একসময় আগুনে পোড়ানো ও ডুবিয়ে দেওয়া ১৪৭টি জাহাজ এখন পাখি, মাছ, এমনকি স্টার্জন প্রজাতির আশ্রয়স্থল।


গবেষক দল বলছে, যদিও যুদ্ধাস্ত্রের গায়ে গড়ে উঠেছে প্রাণের উপনিবেশ, তবে এগুলো দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ধীরে ধীরে এসব অস্ত্র সরিয়ে নিরাপদ কৃত্রিম আশ্রয়স্থল তৈরি করলে সমুদ্রজীবন আরও সমৃদ্ধ হবে।


যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে গড়ে ওঠা এই নতুন জীবন যেন প্রমাণ করে, প্রকৃতি সবসময়ই নিজের পথ খুঁজে নেয়—যদিও মানুষ রেখে যায় মৃত্যু আর বিষের স্মৃতি।
 

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

সন্ধ্যায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা
সন্ধ্যায় ‘অতি জরুরি’ বৈঠকে বসছে ঐকমত্য কমিশন
আমি নিজেই পিআর বুঝি না : মির্জা ফখরুল
অক্টোবরে বাড়ছে ট্রিপ সংখ্যা রবিবার থেকে ১ ঘন্টা বেশি চলবে মেট্রোরেল
সব রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে সই করবে : আইন উপদেষ্টা
ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ অবরোধ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের
পুয়ের্তো রিকোর জালে মেসির আর্জেন্টিনার ৬ গোল
স্বাক্ষরবিহীন ব্যালট পেপার বিতর্কে তোলপাড়
চাকসু নির্বাচন অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়ার অভিযোগ
রোম সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস
মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে ৯ জনের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
মিরপুরের আগুন গার্মেন্টসের দ্বিতীয় তলা থেকে ৯ জনের লাশ উদ্ধার
হাসিনাকে ফেরাতে রেড নোটিশ জারির পদক্ষেপ
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ১৯ অক্টোবরের মধ্যে এনিসিপিকে প্রতীক নিতে হবে
শিশুদের জন্য বিপজ্জনক ভারতের ৩ কফ সিরাপ : ডব্লিউএইচও
আগামী রবিবার থেকে মাসব্যাপী শিশু-কিশোরদের বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকাদান শুরু