ইসলামের প্রথম মসজিদ
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩:৩৭, ৬ অক্টোবর ২০২৫

ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মসজিদ হলো মসজিদে কুবা। এটি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পথে স্থাপন করা হয়েছিল। হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজ হাতে এই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন। মসজিদে কুবা ইসলামি সমাজ ও সম্প্রদায়ের প্রথম সংগঠিত স্থান হিসেবেও পরিচিত।
হিজরতের সময় যখন হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা ত্যাগ করে মদিনার পথে আসছিলেন, তখন কুবা গ্রামে উপস্থিত মানুষদের সাথে মিলিত হয়ে তিনি মসজিদটির ভিত্তি স্থাপন করেন। মসজিদটি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও মানুষের জন্য পবিত্র আশ্রয়স্থল হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিল। কোরআনে এই মসজিদের বিশেষ মর্যাদা উল্লেখ করা হয়েছে। সুরা তওবার ১০৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার উপর প্রথম দিন থেকে তা বেশী হকদার যে, আপনি সেখানে নামাজ আদায় করতে দাঁড়াবেন। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ এই আয়াত মসজিদে কুবার পবিত্রতা ও গুরুত্ব তুলে ধরে।
মসজিদে কুবা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও নৈতিক শিক্ষা প্রদানের কেন্দ্র ছিল। নবীজি (সা.) এখানে অবস্থানকালে মুসলমানদের নামাজের নিয়ম, সমাজের নৈতিক ও সামাজিক আদর্শ ও সহমর্মিতা শিক্ষা দিয়েছেন। এখানে মুসলমানরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর ইবাদত করেছেন এবং ইসলামি সমাজের ভিত্তি গড়েছেন।
মসজিদটি মূলত সরল ও প্রাকৃতিক উপাদানে নির্মিত হয়েছিল। স্থাপত্যে কোনো অতিরিক্ত জটিলতা ছিল না, কারণ নবীজি (সা.) কেবল চেয়েছেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং সহজতার মধ্যে ধর্মপ্রচারের গুরুত্ব হোক। পরবর্তীতে মুসলমান শাসকরা মসজিদটি সম্প্রসারণ করেছেন, কিন্তু পবিত্রতার মাহাত্ম্য অটুট রয়েছে।
মসজিদে কুবার ফজিলতও অনন্য। হাদিসে বর্ণিত আছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, মসজিদে কুবায় দুই রাকাত নামাজ পড়লে একটি ওমরাহর সওয়াব পাওয়া যায়। (ইবনে মাজাহ) এই ফজিলত মুসলিমদের জন্য এক অনন্য প্রেরণা।
মসজিদে কুবা ইসলামের প্রথম সামাজিক কাঠামোর কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। এখানে মুসলমানরা কেবল নামাজ আদায় করেনি, বরং পরস্পরের সঙ্গে সৌজন্য, সহযোগিতা ও মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা গ্রহণ করেছে।
সৌদি সরকারের ভিশন ২০৩০-এর অংশ হিসেবে মসজিদে কুবাকে নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কিং সালমান প্রজেক্ট ফর দ্য এক্সপ্যানশন অব কুবা মসজিদ’। পরিকল্পনা অনুযায়ী মসজিদের আয়তন প্রায় পঞ্চাশ হাজার বর্গমিটার হবে। এর ফলে ধারণক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ছেষট্টি হাজার নামাজির। বর্তমানে মসজিদে কুবায় বিশ হাজারের মতো মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। সম্প্রসারণ সম্পন্ন হলে এর ধারণক্ষমতা প্রায় তিনগুণ হবে।
বর্তমান স্থাপত্যের দিক থেকেও মসজিদটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। চারপাশে চারটি মিনার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বিভিন্ন মাপের একাধিক গম্বুজ মসজিদকে দিয়েছে শোভাময় রূপ। মূল নামাজঘরের ভেতরে মিহরাব ও মিম্বর সাদা মার্বেলের কাজ দিয়ে তৈরি। প্রাঙ্গণজুড়ে খোলা জায়গা, যার চারপাশে কলোনেড দিয়ে ঘেরা বারান্দা। এখানে আলো-বাতাস প্রবাহের জন্য কাঠের খাঁচাযুক্ত জানালা বসানো হয়েছে। মেঝে ও ছাদে মার্বেলের ব্যবহার মসজিদকে দিয়েছে আভিজাত্য।
ভেতরের নামাজঘর ছাড়াও মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ অংশে আলাদা নামাজঘর রয়েছে। খোলা প্রাঙ্গণগুলোতে ছায়া দেওয়ার জন্য আধুনিক ছাউনি তৈরি করা হচ্ছে, যাতে রোদ ও তাপ থেকে মুক্ত থেকে নামাজ আদায় করা যায়। এছাড়া মসজিদের বাইরের অংশেও বড় পরিসরে বসার ও হাঁটার জায়গা রাখা হচ্ছে।
এভাবে মসজিদে কুবা কেবল ইসলামের প্রথম মসজিদ হিসেবে ইতিহাস বহন করছে না, বরং নতুন রূপে এটি হয়ে উঠছে মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিশাল ইবাদতের কেন্দ্র। প্রতি বছর লাখো মানুষ এখানে এসে নামাজ আদায় করেন। ভবিষ্যতে সম্প্রসারণ শেষ হলে আরও বেশি মানুষ একইসঙ্গে এখানে দাঁড়িয়ে ইবাদত করার সুযোগ পাবেন।