খাঁটি রুপা যাচাইয়ে লক্ষ্যণীয় ১০টি প্রশ্নের সমাধান
জীবনযাপন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪:৪৪, ১০ নভেম্বর ২০২৫
খাঁটি রুপার গয়না। ছবি: সংগৃহীত
গয়না গড়তে মধ্যবিত্ত পরিবার নির্ভর করে সোনা বা রুপার উপর। আর সোনার বর্তমান বাজারের অবস্থা প্রায় নাভীশ্বাস ওঠার মতো। ফলে এখন রুপাই একমাত্র ভরসা। রুপার ঝলমলে সৌন্দর্য আর ঐতিহ্যের ছোঁয়ার জুড়ি নেই। তবে সেই রুপা হতে হবে খাঁটি রুপা। কিন্তু এখন বাজারে এমন অনেক দোকান আছে, যেখানে ‘খাঁটি’ কথাটার অর্থই হারিয়ে গেছে। ঝকঝকে দেখতে, কিন্তু আসলে ভেতরে শুভঙ্করের ফাঁকি। তাই রূপা কিনতে গেলে শুধু দাম নয়, জানতে হবে কিছু বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের উত্তর।
কি সেই ১০টি প্রশ্নের উত্তর, যার মাধ্যমে সহজেই বুঝবেন দোকানদার সত্যিই আপনাকে রুপার গয়না দিচ্ছে নাকি ‘খাটি রুপা’ বলে চালিয়ে দিচ্ছে নকল কিছু।আসুন জেনে নেই-
১. রুপার পিউরিটি ৯২৫, ৯০০ না ৮৫০
রুপার বিশুদ্ধতা বোঝাতে সংখ্যা জরুরি। তাই শুধু ‘খাঁটি’ বললেই চলবে না। ৯২৫ মানে ৯২.৫ শতাংশ রুপা, এটাই আন্তর্জাতিক মান। কোনো দোকানদার যদি শুধু ‘খাটি রুপা’ বলে থেমে যায়, বুঝে নেবেন, গল্পে ফাঁক আছে।
২. রুপার গয়নায় লাগানো স্ট্যাম্প বা মার্কা
রেডিমেড গয়নার ক্ষেত্রে, খাঁটি রুপার গয়নায় সাধারণত ৯২৫, ৯০০ বা ৯৯৯ লেখা স্ট্যাম্প থাকে। যদি দোকানি স্ট্যাম্প দেখাতে না পারেন বা কথা ঘুরিয়ে দেন, তাহলে আপনিও ঘুরে যান অন্য দোকানে।

৩. এই রুপা কোথা থেকে আসে
ভালো ব্যবসায়ী তার পণ্যের সোর্স বলতে পারবে - যেমন, চট্টগ্রামের গোল্ড ঘাট, নওয়াবপুর সিলভার মার্কেট বা দুবাই সাপ্লাই ইত্যাদি। কেউ যদি বলে, ‘এইটা আমাদের লোকাল সোর্স’, তাহলে দেরি না করে এখুনি সতর্ক হোন।
৪. ওজন মাপার পদ্ধতি
রুপা কিনতে ডিজিটাল স্কেল বাধ্যতামূলক। দাড়িপাল্লা মানেই ফাঁকিবাজি।তাই দাড়িপাল্লার মাপ মানবেন না।
৫. রিটার্ন পলিসি রসিদে লিখে নিন
ভালো জুয়েলারি ব্যবসায়ী রিটার্ন পলিসি রসিদে লিখে দেয়, আর ফাঁকিবাজ ব্যবসায়ী বলবে ‘রসিদ লাগবেনা। এসে বললেই হবে।’
৬. রুপা ময়লা হলে বা রঙ বদলে গেলে ক্লিনিং সার্ভিস ফ্রি
আসল দোকানদার পলিশ বা ক্লিনিং সার্ভিস ফ্রি করে দেয়। আর ফ্রি না হলে সামান্য চার্জ নিয়ে করে দেয়। কিন্তু ঠকবাজ দোকানি পণ্য বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর আর কোনো সার্ভিস দিতে চাইবে না। কারণ, দায়িত্ব নিলে ফাঁকি প্রমাণ হয়ে যেতে পারে।
৭. চেইন বা আংটির জোড়াগুলোর ঝালাই
অনেকে রুপা বিক্রি করে কিন্তু জোড়া দেয় তামা দিয়ে। দোকানদার যদি প্রশ্ন শুনে চোখ সরিয়ে নেয় তাহলে বুঝে নিন, জোড়ায় ঝামেলা আছে। অর্থাৎ, মিক্সড ধাতু দিয়ে জোড়ার ঝালাই দেয়া।

৮. একটু অ্যাসিড টেস্ট দেখাবেন কি
অ্যাসিড টেস্টেই ধাতুর আসল রুপ ধরা পড়ে। মাত্র ১৫ সেকেন্ডের কাজ। তাই সৎ দোকানদার নিজের পণ্যের মান প্রমাণ করতে এই টেস্টে রাজি থাকবেন। কিন্তু যদি দোকানদার বলেন ‘এখন ব্যস্ত’ বা ‘আমাদের সার্টিফিকেট আছে’ - তাহলে বুঝবেন রুপার মানে সমস্যা আছে।
৯. আমি একটু ভিডিও করে রাখতে চাই
ওজন, স্ট্যাম্প আর রসিদের ভিডিও করতে চাইলে সৎ দোকানদার কোনো আপত্তি করবেন না। কিন্তু নকল দোকানদার ধরা পড়ার ভয়ে বলবে, ‘নিয়ম নাই, মালিক রাগ করে।’
১০. ক্যারেট, ওজন, মূল্য ও ফেরত নীতি
খাঁটি ব্যবসায়ী সব রশিদেই লিখে দেয়। ফাঁকিবাজ শুধু মুখে মুখে বলে। মনে রাখবেন, কাগজে লেখা মানেই প্রমাণ।আর মুখের কথা মানেই শুভঙ্করের ফাঁকি।
তাই গয়না কিনতে গেলে একটু দেখেশুনে যাচাই করে কিনুন সেটা রুপা হেক বা সোনা।
