এআই দিয়ে ডিজাইন করা প্রথম কার্যকর ভাইরাস-জিনোম
স্ট্যানফোর্ড-আর্ক গবেষণা, নিরাপত্তা ও নৈতিক প্রশ্ন
প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯:৫৪, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

স্ট্যানফোর্ড ও আর্ক ইনস্টিটিউটের গবেষকরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বিশ্বের প্রথমবার কার্যকর ভাইরাস-জিনোম ডিজাইন করে, এবং পরীক্ষায় তা ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়াকে সংক্রমণ করে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে।
গবেষণায় ব্যবহৃত ভাইরাসটি হচ্ছে ব্যাকটেরিওফেজ ফাই-এক্স-১৭৪ — একটি ছোট আকারের ডিএনএ ভিত্তিক ফেজ যা ই-কোলাইকে আক্রমণ করে। ভেরিফায়েবল তথ্য অনুযায়ী এর জিনোমে প্রায় ৫ হাজার ৩৮৬ ডিএনএ অক্ষর এবং ১১টি জিন রয়েছে; ১৯৭৭ সালে এটিই প্রথম সম্পূর্ণ সিকোয়েন্স করা জিনোমগুলোর মধ্যে ছিল এবং ২০০৩ সালে এটি প্রথমবার কৃত্রিমভাবে তৈরি হয়েছিল। এবার গবেষকরা একই জেনোমের নকশা তৈরিতে এআই ব্যবহার করেছেন—এটাই এই পরীক্ষার নতুন দিক।
গবেষক দলের বর্ণনা অনুযায়ী, তারা ‘ইভো’ নামের একটি জেনোমিক ভাষা মডেল তৈরি ও প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যা ভাইরাস পরিবারের হাজারো জিনোম বিশ্লেষণ করে অনেকগুলি সম্ভাব্য নকশা তৈরি করেছে। পরীক্ষাগারে এই নকশাগুলো থেকে শত শত নমুনা তৈরি করে ই-কোলাইতে প্রয়োগ করা হলে দেখা যায় মোট তৈরি ৩০২টি নকশার মধ্যে ১৬টি কার্যকর হয়েছে। পরীক্ষায় পাওয়া নতুন মিউটেশনগুলোর সংখ্যা রিপোর্টে শতাধিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে (প্রতিবেদন অনুযায়ী কয়েক শত নতুন মিউটেশন নিয়মের বাইরে ধরা পড়েছে) এবং এসবের মধ্যে অনেকে আগে কখনো দেখা যায়নি। বিশেষ এক নকশায় ডিএনএ প্যাকেজিং প্রোটিনটি অন্য কোনো ভাইরাস থেকে নেয়া তুলনীয় উপাদানের সঙ্গে মিল দেখায় এবং ক্রায়ো-ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে দেখা গিয়েছে ওই প্রোটিন ভাইরাসের খোলসে সঠিকভাবে বসেছে—যা পূর্বের প্রচেষ্টায় সহজে সম্ভব হতো না।
তারা আরও উল্লেখ করেছেন, যখন ব্যাকটেরিয়া স্বাভাবিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, তখনও এই এআই-তৈরি ভাইরাস কয়েক দিনের মধ্যেই সেই প্রতিরোধ ভেঙে ফেলেছে—এক কথায় নমুনা-নকশা-পুনরাবৃত্তি ও দ্রুত অপ্টিমাইজেশনের সুবিধা গবেষণায় স্পষ্ট হয়েছে।
কী সচেতনতা প্রয়োজন?
এই ফলাফল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সম্ভাবনার নতুন দরজা খুলে দিলেও তৎক্ষণাত্ই বায়োসুরক্ষা ও নৈতিকতার তীব্র প্রশ্ন তুলেছে। নিম্নলিখিত বিষয়গুলো প্রসঙ্গে গুরুত্ব দেওয়া উচিত:
প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ: এ ধরনের ক্ষমতা থাকলে কন্ট্রোল-কৌশল, অ্যাক্সেস-নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক নিয়মাবলী জরুরি; গবেষণা স্বচ্ছ ও কন্টেইনমেন্ট-প্রটোকল অনুসারে হওয়া উচিত।
নিরাপত্তা-মূলক মূল্যায়ন: সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিবরণ অনুযায়ী গবেষণার সম্ভাব্য ঝুঁকি-নিয়ন্ত্রণ এবং তত্ত্বাবধান কীভাবে হয়েছে তা প্রকাশ্য করা দরকার।
নৈতিক ও আইনগত কাঠামো: কৃত্রিমভাবে ডিজাইন করা জীববিদ্যাগত উপাদান নিয়ে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইন, নীতি ও নৈতিক দিকগুলো আপডেট ও রেগুলেট করার তাগিদ আছে।
পাবলিক জ্ঞাততা: সাধারণ পাঠক ও নীতিনির্ধারকদের কাছে এ ধরনের উন্নয়ন ও তার অর্থ সম্পর্কে স্পষ্ট, বোধগম্য ব্যাখ্যা জরুরি যাতে বিভ্রান্তি ও অযথা আতঙ্ক না তৈরী হয়।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস