‘অরাত্তাই’ বনাম ‘হোয়াটসঅ্যাপ’
ভারতীয় মেসেজিং অ্যাপ কি পারবে মেটার দাপট ভাঙতে?
প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫:১১, ৮ অক্টোবর ২০২৫

ভারতে হোয়াটসঅ্যাপ শুধু একটি অ্যাপ নয়, বরং জীবনের অংশ। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভারতীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘Zoho’-র তৈরি মেসেজিং অ্যাপ ‘অরাত্তাই’ (Arattai) দেশের ডিজিটাল অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
‘অরাত্তাই’, যার অর্থ তামিল ভাষায় ‘আড্ডা’ বা ‘গল্পগুজব’, ২০২১ সালে সফট লঞ্চ হলেও, তেমন সাড়া পায়নি। কিন্তু এবার মাত্র এক সপ্তাহে ৭০ লাখ ডাউনলোড অর্জন করে অ্যাপটি হঠাৎই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।
‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ আন্দোলনের জোয়ারে জনপ্রিয়তা
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আত্মনির্ভরতার আহ্বান—“Make in India, Spend in India”—এই উত্থানের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান থেকে শুরু করে বহু ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেশীয় অ্যাপ ব্যবহারের আহ্বান জানানোর পর থেকেই অরাত্তাইয়ের ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যায়।
Zoho-এর সিইও মণি ভেম্বু জানান, তিন দিনের মধ্যেই দৈনিক সাইন-আপ সংখ্যা ৩ হাজার থেকে বেড়ে ৩.৫ লাখে পৌঁছেছে।
হোয়াটসঅ্যাপের তুলনায় কোথায় অবস্থান করছে অরাত্তাই
যদিও এই মুহূর্তে অরাত্তাইয়ের ব্যবহারকারীর সংখ্যা হোয়াটসঅ্যাপের ৫০ কোটি মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী-র কাছাকাছি নয়, তবে এর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে।
অ্যাপটিতে হোয়াটসঅ্যাপের মতোই মেসেজিং, ভয়েস ও ভিডিও কল সুবিধা রয়েছে।
এটি লো-এন্ড ফোন ও কম ইন্টারনেট স্পিড-এও কাজ করার উপযোগীভাবে তৈরি, যা ভারতের গ্রামীণ ব্যবহারকারীদের আকর্ষণ করছে।
ব্যবহারকারীদের অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, অরাত্তাইয়ের ইন্টারফেস ও ডিজাইন সহজ ও আকর্ষণীয়, এবং দেশীয় উৎপাদন হওয়ায় এর প্রতি গর্ববোধও বাড়ছে।
ডেটা প্রাইভেসি নিয়ে প্রশ্ন
অরাত্তাই যদিও ভয়েস ও ভিডিও কলের ক্ষেত্রে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন (E2EE) প্রদান করে, তবে টেক্সট মেসেজে এখনো এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই।
টেক বিশেষজ্ঞ শশিধর কে. জে. বলছেন, ভারত সরকারের বার্তা ট্রেসযোগ্য রাখার আইন থাকায় এই সিদ্ধান্ত ব্যবহারকারীর গোপনীয়তার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
Zoho জানিয়েছে, তারা খুব দ্রুত টেক্সট মেসেজেও E2EE চালু করবে এবং ব্যবহারকারীদের তথ্য সুরক্ষার বিষয়ে স্বচ্ছ থাকবে।
পূর্বসূরি ব্যর্থতাগুলোর শিক্ষা
এর আগে দেশীয় অ্যাপ Koo (X-এর বিকল্প) ও Moj (TikTok-এর বিকল্প) প্রথম দিকে জনপ্রিয় হলেও স্থায়ীভাবে সফল হতে পারেনি।
প্রযুক্তি বিশ্লেষক প্রসান্তো কে. রায় বলেন, “জাতীয়তাবাদী আবেগ ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করতে পারে, কিন্তু টিকে থাকতে হলে অ্যাপটির কার্যকারিতা ও ব্যবহারকারীর আস্থা—দুটিই প্রমাণ করতে হবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, অরাত্তাই যদি সত্যিই ব্যবহারকারীর আস্থা অর্জন করতে পারে এবং গোপনীয়তার নিশ্চয়তা দিতে পারে, তবে এটি ভারতের ডিজিটাল স্বনির্ভরতার এক বড় পদক্ষেপ হতে পারে।
তবে হোয়াটসঅ্যাপের মতো বিশ্বজোড়া অভ্যাস গড়ে তোলা অ্যাপকে হারানো সহজ হবে না।
Zoho-এর সিইও বলেন,“আমরা চাই ব্যবহারকারীরা যেন তাদের তথ্যের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখেন—আর সেইসঙ্গে দেশের আইনি কাঠামোও মানা হয়।”সূত্র : বিবিসি