ডেটিং ও সম্পর্ক পরামর্শে এআই-এর ঝোঁক
জেনারেশন জেডের অর্ধেকের বেশি ব্যবহার করছে চ্যাটজিপিটি
প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭:০৩, ৫ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কের জটিলতা কিংবা ডেটিং-এর অনিশ্চয়তার সময়ে অনেকেই বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করতে সংকোচ বোধ করেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে এখন অনেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বা চ্যাটবটের দ্বারস্থ হচ্ছেন। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের শেফিল্ডের বাসিন্দা র্যাচেল (ছদ্মনাম) জানান, তিনি এক ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে জটিল আলোচনার আগে চ্যাটজিপিটি থেকে পরামর্শ নিয়েছিলেন। চাকরির খোঁজে ব্যবহৃত এই টুলকে তিনি ব্যক্তিগত যোগাযোগের ক্ষেত্রেও কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন।
র্যাচেল বলেন, “আমি কীভাবে আত্মরক্ষামূলক না হয়ে কথোপকথনটা শুরু করতে পারি—এই প্রশ্ন করেছিলাম। চ্যাটজিপিটি যেন আমার পাশে থেকে সাহস জোগাল। থেরাপির ভাষায় ‘বাউন্ডারি’ বা ‘নিজের শর্তে কথা বলা’র মতো শব্দ ব্যবহার করেছিল।”
শুধু র্যাচেল নন, মার্কিন অনলাইন ডেটিং প্রতিষ্ঠান ম্যাচ–এর গবেষণা অনুযায়ী, জেনারেশন জেড (১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া প্রজন্ম)–এর প্রায় অর্ধেকের বেশি ইতিমধ্যেই চ্যাটজিপিটি বা অন্যান্য এলএলএম ব্যবহার করেছে ডেটিং বা সম্পর্ক বিষয়ক পরামর্শের জন্য।
মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ
মনোবিজ্ঞানী ও সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. লালিতা সুগলানি বলছেন, এআই মানুষকে বার্তা তৈরি করতে, বিভ্রান্তিকর টেক্সট বিশ্লেষণ করতে কিংবা দ্বিতীয় মতামত পেতে সহায়তা করতে পারে। এটা যেন “ডায়েরির পাতার মতো” কাজ করে—একটি প্রতিফলনমূলক জায়গা দেয়।
তবে তিনি সতর্ক করেন, “এআই প্রশিক্ষিত হয় সহায়ক ও ইতিবাচক হতে, ফলে অনেক সময় এটি ব্যবহারকারীর পক্ষপাতদুষ্ট চিন্তাধারা প্রতিধ্বনিত করতে পারে। এতে বিকৃত বয়ান বা এড়িয়ে চলার প্রবণতা আরও বাড়তে পারে।” উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ব্রেকআপ টেক্সট লিখতে এআই ব্যবহার করা হলে তা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়ানোর একটি কৌশল হয়ে দাঁড়াতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত সম্পর্ক–সংক্রান্ত মানসিক বিকাশে বাধা তৈরি করে।
বাজার ও নিরাপত্তা ঝুঁকি
নিউইয়র্কভিত্তিক উদ্যোক্তা এস লি তৈরি করেছেন ‘মেই’নামে একটি বিনামূল্যের এআই সেবা, যা সম্পর্ক–সংক্রান্ত দ্বিধা–দ্বন্দ্বের উত্তর দেয় কথোপকথনের মতো করে। লি জানান, তার প্ল্যাটফর্মে উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর অর্ধেকের বেশি যৌনতা–সংক্রান্ত, যা মানুষ বন্ধু বা থেরাপিস্টের সঙ্গে আলোচনা করতে দ্বিধা করে।
তবে তিনি স্বীকার করেন, সম্পর্ক–সংক্রান্ত পরামর্শের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও নৈতিকতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেই ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ন্যূনতম পর্যায়ে সংগ্রহ করে, ইমেইল ছাড়া পরিচয় শনাক্তকারী তথ্য চায় না এবং ৩০ দিনের মধ্যে ডেটা মুছে ফেলে বলে দাবি করেন লি।
মিলেমিশে ব্যবহার
অনেকে আবার এআই ও মানব থেরাপি—দুইয়ের সমন্বয় করছেন। লন্ডনের করিন (ছদ্মনাম) গত বছর এক সম্পর্ক শেষ করার সময় চ্যাটজিপিটির পরামর্শ নিয়েছিলেন। পরে আবার নতুন সম্পর্কের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ জিলিয়ান তুরেকি বা নিকোল লেপেরার স্টাইলে উত্তর চাইতেন।
করিন জানান, “থেরাপিস্ট আমার শৈশব বা গভীর মানসিক কারণ নিয়ে কাজ করেন, আর চ্যাটজিপিটি কেবল বর্তমান পরিস্থিতির সহজ পরামর্শ দেয়। এটা আমাকে শান্ত করে।”
ডেটিং ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে এআই যেন এক নতুন ডিজিটাল সহচর। বন্ধু-পরিজনের অভাব, দ্রুত সমাধান বা ব্যক্তিগত বিষয় গোপন রাখার ইচ্ছা—সব মিলিয়ে মানুষ এখন চ্যাটজিপিটি–র মতো টুলের দিকে ঝুঁকছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই–কে সহায়ক উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা উচিত, মানুষের সঙ্গে বাস্তব সংযোগের বিকল্প হিসেবে নয়।