গুগলের গবেষণা
প্রযুক্তি খাতের ৯০% কর্মী এখন এআই-নির্ভর
প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪:২৮, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি খাতের প্রায় সব কর্মী এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন বলে জানিয়েছে টেক জায়ান্ট গুগল। গুগলের ডোরা গবেষণা বিভাগের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচ হাজার প্রযুক্তি পেশাজীবীর ওপর করা জরিপে দেখা গেছে—তাদের ৯০ শতাংশই নিয়মিত কাজে এআই ব্যবহার করছেন। যা গত বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষ করে কোড লেখা, সম্পাদনা ও পরিবর্তনের মতো কাজগুলোয় এআই-এর ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। এর ফলে প্রযুক্তি খাতে কাজের ধরন আমূল বদলে যাচ্ছে।
গবেষণার ফল প্রকাশের প্রেক্ষাপটে চাকরির বাজারে এআই-এর প্রভাব নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অ্যানথ্রোপিকের প্রধান নির্বাহী দারিও অ্যামোডেই সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছেন, এআই বেকারত্ব বাড়াতে পারে। ইতিমধ্যেই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রাথমিক পর্যায়ের চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে, যা অনেকের মতে সাম্প্রতিক ছাঁটাই ঢেউয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত।
গুগল বলছে, তাদের এআই-ভিত্তিক টুলস সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের সম্ভাবনা আরও প্রসারিত করছে। এসব টুলসের মধ্যে কিছু ফ্রি, আবার কিছু ব্যবহার করতে মাসে ৪৫ ডলার খরচ করতে হয়। গুগলের জেমিনি কোড অ্যাসিস্ট প্রকল্পের পরিচালক রায়ান জে সালভা জানান, “গুগলের প্রায় সব কাজেই এখন এআই ব্যবহার করা হচ্ছে—ডকুমেন্টেশন লেখা থেকে শুরু করে কোড এডিটর পর্যন্ত।”
শুধু প্রযুক্তি খাতেই নয়, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন খাতেও এআই ব্যবহার বাড়ছে। ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানির জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বের ৭৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান অন্তত একটি ব্যবসায়িক কাজে এআই ব্যবহার করছে। গ্রাহকসেবায় চ্যাটবট ও ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট, ডাটা বিশ্লেষণ ও পূর্বাভাস, উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় স্বয়ংক্রিয়তা, মার্কেটিং কৌশল নির্ধারণ এবং সাইবার সুরক্ষায় এআই কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
তবে সবকিছুই ইতিবাচক নয়। সম্প্রতি ‘ওয়ার্কস্লপ’ নামে নতুন এক সমস্যার কথা উঠে এসেছে। এর অর্থ—এআই দ্বারা তৈরি নিম্নমানের কাজ, যা ব্যবসায় আর্থিক ও সামাজিক ক্ষতি ডেকে আনছে। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ এ শব্দটি ব্যবহার করে সতর্ক করেছে যে, এ ধরনের নিম্নমানের কনটেন্ট কর্মদক্ষতা হ্রাস ও কর্মীদের মধ্যে বিশ্বাসের সংকট তৈরি করছে।
এমআইটি মিডিয়া ল্যাবের গবেষণায় আরও জানা গেছে, এক-দশমাংশের কম এআই প্রকল্প আসলেই প্রতিষ্ঠানের আয়ে অবদান রাখছে। বরং ৯৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এআই বিনিয়োগ থেকে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাচ্ছে না।
এআই ব্যবহার তাই এখনো দ্বিমুখী বাস্তবতা তৈরি করছে—একদিকে ব্যবসায় গতি ও দক্ষতা বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে নিম্নমানের আউটপুট ও কর্মসংস্থান সংকটের ঝুঁকি তৈরি করছে।