৫০% ডায়াবেটিক রোগীকে সেবা দিচ্ছে ডায়াবেটিক সমিতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬:৪১, ১৪ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৬:৫৯, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
ডায়াবেটিক রোগীকে সেবা দিচ্ছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। ছবি: সংগৃহীত
দেশের মোট ১ কোটি ৩৮ লাখ ডায়াবেটিক রোগীর মধ্যে ৬৫ লাখের বেশি, অর্থাৎ প্রায় ৫০ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগীকে সেবা দিচ্ছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি।
সমিতি জানায়, বারডেম, বিআইএইচএস (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ হেলথ সায়েন্সেস) ও ন্যাশনাল হেলথকেয়ার নেটওয়ার্কের (এনএইচএন)- ৩৪টি কেন্দ্র এবং ৯৪টি অধিভুক্ত সমিতির মাধ্যমে রাজধানীসহ সারা দেশে এই সেবা দেওয়া হচ্ছে।
‘ডিসটেন্স লার্নিং প্রজেক্ট’-এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৩৮তম ব্যাচ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজারের বেশি জেনারেল প্র্যাকটিশনারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডায়াবেটিস-সেবা সম্প্রসারণ করা সম্ভব হয়েছে।
সমিতি জানায়, সমিতির প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক মরহুম ডা. মো. ইব্রাহিমের লক্ষ্য ও আদর্শ ছিলো- ‘কোনো ডায়াবেটিক রোগী গরিব হলেও বিনা চিকিৎসায়, অনাহারে এবং বেকার অবস্থায় মারা যাবে না’। সেই আদর্শ অনুসরণ করে বারডেম, এনএইচএন, বিআইএইচএস ও অধিভুক্ত সমিতির মাধ্যমে বর্তমানে প্রায় ৬৫ লাখ রেজিস্টার্ড ডায়াবেটিক রোগীকে স্বল্পমূল্যে মৌলিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ছাড়াও বিনামূল্যে ইনসুলিন ও ওষুধ বিতরণ বাবদ গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ব্যয় হয়েছে প্রায় ১১৪ কোটি টাকা।
কাজীদের সম্পৃক্ত করে ’গর্ভধারণ-পূর্ব সেবা’:
সমিতির তথ্য অনুযায়ি, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ও টেকসই কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানোর জন্য ‘গর্ভধারণ-পূর্ব সেবা’ নামক একটি বিশেষ প্রকল্প নিয়েছে সমিতি। এ লক্ষ্যে ৪০০ কাজীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা পরিকল্পিত গর্ভধারণের ব্যাপারে নবদম্পতিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। সারা দেশে স্থাপিত ৫৪টি ‘গর্ভধারণ-পূর্ব সেবা কেন্দ্র’ থেকে নারীরা স্বল্পমূল্যে গর্ভধারণ সংক্রান্ত সেবা নিতে পারছেন।
সমিতি জানায়, বর্তমানে সারা দেশে প্রশিক্ষিত ৪০০ কাজি ও ৩০০ চিকিৎসক এই কর্মসূচিতে যুক্ত আছেন। গর্ভবতী মায়েদের অপুষ্টি থাকলে তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস হবার ঝুঁকি অনেক বেশি। ফলে বিয়ের সময় মেয়েদের এ ব্যাপারে সচেতন করতে পারলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে অনেক ভালো ফল পাওয়া যাবে।
এ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি ’গর্ভধারণ-পূর্ব সেবা’ নিশ্চিত করতে পারলে প্রসবকালীন নারী ও শিশুমৃত্যুর হার কমানো এবং নারীসহ আগামী প্রজন্মকেও ডায়াবেটিসের ভয়াবহ প্রকোপ থেকে অনেকটাই রক্ষা করা সম্ভব।
ইমামসহ ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করা:
ডায়াবেটিস-সেবা তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে সমিতি ডায়াবেটিস সেবাদান কর্মসূচিতে ধর্মীয় নেতাদেরকেও সম্পৃক্ত করেছে। এই কর্মসূচিতে মসজিদে খুতবার মাধ্যমে এবং অন্যান্য ধর্মশালায় ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে ডায়াবেটিস প্রতিরোধের বাণী প্রচার করা হচ্ছে।
সমিতি জানায়, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ কর্মসূচির অংশ হিসোবে দেশের প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একটি মসজিদে ডায়াবেটিস কর্নার করার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১০০ মসজিদে ডায়াবেটিস কর্নার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ১০০ ইমামকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামরা স্বল্পমূল্যে রক্তচাপ ও রক্ত-গ্লুকোজ পরীক্ষার পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এ উদ্যোগ নেয়া হবে। অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়গুলিতেও, বিশেষ করে মন্দির ও গির্জায়ও একই ধরনের উদ্যোগ নেবে সমিতি।
জানায়, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির এমন নানামুখি কর্মসূচির ফলে এখন মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। বিশেষ করে ‘গর্ভধারণ-পূর্ব সেবা’ ও ‘ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ’ প্রকল্প দুটির মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ ডায়াবেটিস-সেবা:
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়-এর অর্থায়নে ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি ‘কান্ট্রি চেঞ্জিং ডায়াবেটিস: মোবাইল ডায়াবেটিস কেয়ার সেন্টার’ নামক কর্মসূচি নিয়েছে। এর মাধ্যমে দেশজুড়ে অসংক্রামক রোগ (ডায়াবেটিস) প্রতিরোধ বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি, ডায়াবেটিক রোগী সনাক্ত করা এবং তাদের জটিলতা নির্ণয়ের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও স্বাস্থ্যসেবা দেবে।
এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য-
১. গাড়িতে ডায়াবেটিস নির্ণয়ের পাশাপাশি আধুনিক ডায়াবেটিস সেন্টারের সুবিধা-সম্পন্ন একটি মোবাইল ডায়াবেটিস কেয়ার সেন্টার তৈরি করা।
২. ডায়াবেটিস কেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে দেশের মানুষদের সচেতন করা।
৩. ডিজিটাল অ্যাপের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের সনাক্ত করার পাশাপাশি গ্লুকোমিটার দিয়ে তাদের রোগ নির্ণয় এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া।
৪. পুরোনো ডায়াবেটিক রোগীদের জটিলতা নির্ণয়ের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেয়া।
বাডাস কমপ্রিহেনসিভ ডিজিটাল হেলথকেয়ার
এই কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সমিতি। এর মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ডায়াবেটিক রোগীদের কাছে উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।
সমিতির পরামর্শ
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, আমরা মনে করি, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগের উৎপত্তি ও ব্যবস্থাপনায় সাযুজ্য থাকায় সকলের সহায়তায় একই সঙ্গে একটি জাতীয় কর্মসূচি প্রণয়ন করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে সুশীল সমাজসহ সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। ডায়াবেটিস ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সকলের সম্মিলিত সহায়তায় এখন একটি গণজোয়ার সৃষ্টি করতে হবে।
