আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস
দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ১ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ, অর্ধেক নারী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫:২১, ১৪ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৫:৫২, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
ছবি: ফাইলফটো
দেশে বর্তমানে ১ কোটি ৩৮ লাখেরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে অর্ধেকই নারী। এমনকি, ডায়াবেটিস আছে এমন অর্ধেকেরও বেশি মানুষ জানেই না যে তাদের ডায়াবেটিস আছে।
অন্যদিকে, ডায়াবেটিসের বৈশ্বিক প্রভাব সম্পর্কে ‘আইডিএফ ডায়াবেটিস এটলাস’ (২০২৫) এর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ি, বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে ৭ম স্থানে রয়েছে।
বিশ্ব ডায়াবেটিস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি এই তথ্য জানায়। গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে বারডেম হাসপাতালে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এমন অবস্থায় আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য: ‘কর্মস্থলে ডায়াবেটিস সচেতনতা গড়ে তুলুন’। দিবসটি উপলক্ষে ডায়াবেটিক সমিতি দেশজুড়ে দুদিনব্যাপি নানা কর্মসূচি নিয়েছে।
বাড়ছে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
সমিতি জানায়, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দেশের গর্ভবতীদের মধ্যেও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ছে। বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ২৬ জন নারীই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যাদের ৬৫ শতাংশই পরবর্তীকালে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়।
সমিতির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আরও জানান, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের ও গর্ভস্থ শিশুদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তা ছাড়া, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণ না করা হয় তবে তাদের পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি আরো বেশি।
চিকিৎসকরা জানান, এ অবস্থায় পরিকল্পিত গর্ভধারণ ও গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বিশ্বে আক্রান্ত ৫৯ কোটি মানুষ
সমিতির তথ্য অনুযায়ি, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫৯ কোটি। ডায়াবেটিস যেহেতু বহুলাংশেই (৭০% পর্যন্ত) প্রতিরোধযোগ্য। ফলে এখনই যদি এ রোগের প্রতিরোধ না করা হয়, তাহলে এই সংখ্যা ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় ৮৫ কোটিতে পৌঁছানোর আশংকা রয়েছে (সূত্র: আইডিএফ ডায়াবেটিস এটলাস, ২০২৫, ১১তম সংস্করণ)।
ডায়াবেটিস কি
ডায়াবেটিক সমিতি জানায়, মানবদেহে কোনো কারণে ইনসুলিন নামক হরমোনের অভাব বা ঘাটতি হলে কিংবা উৎপাদিত ইনসুলিন কার্যকরভাবে শরীরে ব্যবহৃত না হলে বা শরীরের ইনসুলিন নিষ্ক্রিয় থাকলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। এই গ্লুকোজ পরে প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে আসে। এ অবস্থাকেই ডায়াবেটিস বলে। ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নির্ধারিত নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চললে এবং প্রয়োজনে পরিমাণ মতো ওষুধ গ্রহণ করলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ ও প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব। ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
ডায়াবেটিসের কারণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক চাপে থাকলে, অতিরিক্ত ফাস্টফুড ও চর্বিযুক্ত খাবার খেলে, শারীরিক পরিশ্রম না করলে, নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে, স্বাভাবিকের চাইতে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিওর, অন্ধত্ব ও অঙ্গচ্ছেদের মতো মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী ঝুঁকি থাকে। এ অবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম করা, মানসিক চাপমুক্ত থাকা, সুষম খাদ্য খাওয়া, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ ও ইনসুলিন গ্রহণ করা, সুশৃক্সখল জীবনযাপন করা প্রয়োজন।
সচেতনতার পরামর্শ
এ ব্যাপারে সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, ডায়াবেটিস আছে এমন রোগীদের অন্তত ৫০ শতাংশ জানেনই না যে তাদের ডায়াবেটিস আছে। এ কারণে দেশের সকল শ্রেণীর মানুষকে এ রোগ সম্পর্কে সচেতন করে তোলা প্রয়োজন। আমাদের সকলেরই উচিত সময়ে সময়ে রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করে দেখা যে ডায়াবেটিস আছে কিনা।
এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরও বলেন, বাংলাদেশসহ পৃথিবীতে এমন পরিবার নেই, যে পরিবারে অন্তত একজন ডায়াবেটিক রোগী, অথবা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন এমন মানুষ নেই। ফলে আমাদের পরিবারকে ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করতে হলে এ বিষয়ে সচেতনতা যেমন সৃষ্টি করতে হবে, তেমনি বেশকিছু উদ্যোগও আমাদের নিতে হবে।
