হারিকেন মেলিসার তাণ্ডবে মৃতভূমি: প্রাণহানী বেড়ে অন্তত ৪৪
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২:০৫, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
ক্যারিবীয় অঞ্চলে প্রবল শক্তি নিয়ে আঘাত হানা বিধ্বংসী হারিকেন ‘মেলিসা’ পুরো অঞ্চলকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে ঝড়ের তাণ্ডবে প্রাণহানী বেড়ে অন্তত ৪৪ জনে পৌঁছেছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ও রয়টার্স জানিয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা গেছে জ্যামাইকায়, যেখানে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে।
হারিকেন মেলিসা মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুরে ঘণ্টায় প্রায় ১৮৫ মাইল (২৯৫ কিলোমিটার) বেগে জ্যামাইকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানে। এটি দেশটির ইতিহাসে ১৮৫১ সালের পর সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রাজধানী কিংস্টন বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা পেলেও পার্বত্য ও উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ঘরবাড়ি, বিদ্যুৎ লাইন, মোবাইল টাওয়ার ও ফসলি জমি সবই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
পরিবহনমন্ত্রী ড্যারিল ভাজ বলেন, “দেশজুড়ে ধ্বংসের চিত্র বর্ণনাতীত। বহু এলাকা এখনো পানির নিচে, উদ্ধারকাজ জটিল হয়ে পড়েছে।” তথ্যমন্ত্রী ডানা মরিস ডিকসন জানিয়েছেন, নিখোঁজদের সন্ধান অব্যাহত রয়েছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ঝড়ের প্রভাবে হাইতিতে ব্যাপক বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। নদীর পানি উপচে পড়ায় অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১০ জন শিশু। দেশটির অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিলের প্রধান লরঁ সাঁ-সির বলেছেন, “এটি আমাদের জন্য গভীর শোকের সময়; হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।”
অন্যদিকে কিউবার পূর্বাঞ্চলে কর্তৃপক্ষ ঝড়ের আগে প্রায় ৭ লাখ ৩৫ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া না গেলেও ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ হিসাব এখনও জানা যায়নি।
ঝড়টির গতি কিছুটা কমে আসলেও এটি এখনও ঘণ্টায় ১০৫ মাইল (১৬৫ কিলোমিটার) বেগে বারমুডার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার জানিয়েছে, এটি এখন ক্যাটাগরি-২ হারিকেন হিসেবে সক্রিয় রয়েছে।
বাহামা দ্বীপপুঞ্জেও আশঙ্কা ছড়িয়েছে; দেশটির সরকার জানিয়েছে, অন্তত ১,৫০০ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উদ্ধারকারী দলগুলো জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করেছে এবং উপকূলীয় এলাকাগুলোতে সতর্কতা জারি রয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সময়মতো পূর্বাভাস ও স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত সতর্কতার কারণে আরও ভয়াবহ প্রাণহানী এড়ানো সম্ভব হয়েছে। তবে প্রাথমিক হিসেবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। ধ্বংস হয়ে গেছে হাজারো ঘরবাড়ি, ফসল, সড়ক ও অবকাঠামো। আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছে।
