‘ওয়ার অন টেরর’-এর স্থপতি ডিক চেনি মারা গেছেন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২০:২৮, ৪ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২০:৪৫, ৪ নভেম্বর ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি। ছবি: সিএনএন
যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী এবং বিতর্কিত ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি আর নেই। ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন সাবেক এই রিপাবলিকান নেতা, যিনি প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে দুই মেয়াদে (২০০১–০৯) দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং বিশ্বজুড়ে আলোচিত ‘ওয়ার অন টেরর’-এর স্থপতি ছিলেন।
চেনির পরিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে নিউমোনিয়া ও হৃদরোগজনিত জটিলতায় ভুগে সোমবার তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে পাশে ছিলেন তার স্ত্রী লিন চেনি, দুই কন্যা লিজ ও মেরি এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
পরিবারের ভাষায়, “ডিক চেনি ছিলেন মহান ও মহৎ মানুষ, যিনি সন্তানদের সাহস, দেশপ্রেম ও নীতির পাঠ দিয়েছেন।” তার স্ত্রী লিন ও কন্যা লিজ চেনি বলেছেন, আমরা তার দেশপ্রেম ও মানবিকতার জন্য চিরকৃতজ্ঞ।
চেনি ছিলেন রিপাবলিকান রাজনীতির কৌশলী মুখ। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ারে হামলার সময় তিনি হোয়াইট হাউসের বাংকারে থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেন। সেদিনের অভিজ্ঞতা তাকে আমূল বদলে দেয়—তখন থেকেই তিনি ‘জাতীয় নিরাপত্তা’কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেন।
এই মানসিকতা থেকেই শুরু হয় আফগানিস্তান ও ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ যুদ্ধ, যা পরবর্তীকালে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও রাজনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। যদিও ২০০৩ সালে ইরাকে ‘ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের অস্তিত্ব’ সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য পরে মিথ্যা প্রমাণিত হয়, চেনি কখনো অনুতাপ প্রকাশ করেননি। বরং ২০১৫ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “তখন যা করেছি, সেটাই সঠিক ছিল। আজও আমি তাই বিশ্বাস করি।”
চেনির রাজনৈতিক জীবন বরাবরই কঠোর সিদ্ধান্তে ভরপুর ছিল। গুয়ানতানামো কারাগারে আটক সন্দেহভাজনদের ওপর নির্যাতন, ওয়াটারবোর্ডিং পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান—সবকিছুতেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে মানবাধিকারের উপরে রাখতেন। তবে তার এই অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রে গভীর বিভাজন সৃষ্টি করে এবং ডেমোক্র্যাটদের কাছে তাকে ‘ওয়ার ক্রাইমস’-এর প্রতীক হিসেবে তুলে ধরে।
ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর চেনির পুরনো রক্ষণশীল রিপাবলিকান মতাদর্শকে পার্টির মূলধারা থেকে ছিটকে দেওয়া হয়।
২০২২ সালে কন্যা লিজ চেনির নির্বাচনী বিজ্ঞাপনে তিনি বলেন, “আমেরিকার ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে বড় হুমকি আর কেউ এই প্রজাতন্ত্রের জন্য তৈরি করেনি। তিনি একজন কাপুরুষ।”
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চেনি নিজে ভোট দেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে—যা এক সময়ের শক্ত রিপাবলিকানের ক্ষেত্রে ছিল ঐতিহাসিক ঘটনা।
১৯৪১ সালে নেব্রাস্কার লিংকনে জন্ম নেওয়া রিচার্ড ব্রুস চেনি কৈশোর কাটান ওয়াইওমিংয়ের ক্যাসপার শহরে। যুবক বয়সে একাধিকবার মদ্যপ অবস্থায় গ্রেপ্তার হলেও জীবন বদলে দেন প্রেমিকা লিন ভিনসেন্টের প্রভাবে। পরে ওয়াইওমিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
রাজনীতিতে প্রবেশ করেন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের প্রশাসনে, এরপর জেরাল্ড ফোর্ডের চিফ অব স্টাফ হন। রোনাল্ড রিগান ও বুশ সিনিয়রের সময় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।
চেনি হৃদরোগে ভুগেছিলেন কৈশোর থেকেই। পাঁচবার হার্ট অ্যাটাকের পর ২০১২ সালে তার হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট হয়।
রাজনীতির বাইরে তিনি ছিলেন প্রখর মৎস্যশিকারপ্রেমী এবং পরিবারের প্রতি গভীর অনুরাগী। মৃত্যুর সময় তার পরিবারে ছিল স্ত্রী লিন, দুই কন্যা ও সাত নাতি-নাতনি।
সূত্র: সিএনএন
