জ্যামাইকায় শতাব্দীর ভয়ঙ্করতম ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮:৪৭, ২৭ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:৫০, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
ক্যারিবীয় দ্বীপদেশ জ্যামাইকার উপকূলে ধেয়ে আসছে ‘হ্যারিকেন মেলিসা’; যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী ক্যাটাগরি-৫ হ্যারিকেন— হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল হ্যারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) জানিয়েছে, এই ঝড়ের স্থায়ী বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৬০ মাইল (প্রায় ২৬০ কিমি), যা আগামী ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টায় আরও শক্তিশালী হতে পারে।
ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়ের পথে জ্যামাইকা
সোমবার সকালে এনএইচসি-এর সর্বশেষ আপডেটে বলা হয়েছে, মেলিসা বর্তমানে জ্যামাইকার রাজধানী কিংস্টন থেকে প্রায় ১৩০ মাইল (২০৯ কিমি) দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ রাত থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে ঝড়ের মূল কেন্দ্র জ্যামাইকার ওপর দিয়ে বয়ে যাবে এবং তারপর মঙ্গলবার রাতেই দক্ষিণ-পূর্ব কিউবা, বুধবারের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব বাহামা দ্বীপপুঞ্জে প্রবেশ করবে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ধীরগতিতে অগ্রসর হওয়ার কারণে মেলিসা ভয়াবহ বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে— চার দিনে ৪০ ইঞ্চি (প্রায় ১০০ সেন্টিমিটার) পর্যন্ত। এতে পাহাড়ধস, ভূমিধস এবং প্রাণঘাতী প্লাবনের ঝুঁকি তীব্র হয়ে উঠেছে।
জরুরি প্রস্তুতি ও সরিয়ে নেওয়া অভিযান
জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস পুরো দেশকে “ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল” ঘোষণা করে রাজধানী কিংস্টনসহ উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলগুলো থেকে দ্রুত সবাইকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ডেসমন্ড ম্যাকেনজি জানিয়েছেন, দ্বীপের ৮৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র ইতিমধ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে এবং জরুরি উদ্ধারদল প্রস্তুত রয়েছে।
রাজধানী ও উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় মানুষ এখন বালুর বস্তা দিয়ে ঘর মজবুত করছে, নৌকা ও মাছ ধরার সরঞ্জাম উঁচু জমিতে সরিয়ে নিচ্ছে। বন্দর ও বাজার বন্ধ রাখা হয়েছে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় অনেকেই আগাম জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধ মজুত করছে।
‘হিস্পানিওলা’ দ্বীপে মৃত্যু ও তাণ্ডব
ঘূর্ণিঝড়টি জ্যামাইকার দিকে ধেয়ে আসার আগে হিস্পানিওলা দ্বীপে (হাইতি ও ডোমিনিকান রিপাবলিক) ভয়াবহ বৃষ্টি ও বন্যা সৃষ্টি করেছে। হাইতিতে অন্তত তিনজন নিহত, শত শত ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।ডোমিনিকান রিপাবলিকে ৭৯ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে এবং ১৩ বছর বয়সী এক কিশোর নিখোঁজ, যাকে সমুদ্রের স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।
সান্তো দোমিনগো শহরে হাঁটু পানিতে হাঁটছে মানুষ, ভেসে যাচ্ছে আবর্জনা ও গাড়ি। উদ্ধারকর্মীরা নৌকা ও দড়ি ব্যবহার করে আটকা পড়া লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছে।
বিপর্যয় ঠেকাতে সময় কম
আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছেন, জ্যামাইকার দক্ষিণ উপকূলে আজ রাতেই ঘণ্টায় ২৫০ কিমি-এর বেশি বেগে ঝড়ো বাতাস ও ৫-৬ মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানতে পারে। ধীরগতির কারণে এটি দীর্ঘস্থায়ী দুর্যোগে রূপ নিতে পারে—যা ১৯৫১ সালের ‘হারিকেন চার্লি’ ও ১৯৮৮ সালের ‘গিলবার্ট’-এর ধ্বংসযজ্ঞকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সরকারি বার্তায় বলা হয়েছে, “নিজ নিজ জীবন রক্ষায় এখনই আশ্রয়ে যান, আগামী ২৪ ঘণ্টা হবে সবচেয়ে বিপজ্জনক।”
