নয়াদিল্লি-বেইজিং উষ্ণতায় ফিরছে চালু হলো ভারত -চীন সরাসরি ফ্লাইট
প্রকাশ: ১১:৫৭, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর যখন দিল্লি-ওয়াশিংটন বাণিজ্য সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে, ঠিক সেই সময় উষ্ণতা বাড়ছে ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্কে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সহযোগীরা অভিযোগ করেছেন—রাশিয়ার তেল কিনে ভারত ইউক্রেনে মস্কোর যুদ্ধকে অর্থ জোগাচ্ছে।
পাঁচ বছর পর সরাসরি ফ্লাইট চালু
কোভিড-১৯ মহামারির পর স্থগিত থাকা দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবা পুনরায় চালু হলো সোমবার। কলকাতা-গুয়াংজু রুটের প্রথম ফ্লাইটে ৫০০ এর ও বেশি যাত্রী অংশ নেন।
ভারতীয় এয়ারলাইন্স ইন্ডিগোর অধিনায়ক অভিজিৎ মুখার্জি জানান, আগে যাত্রীদের ব্যাংকক বা সিঙ্গাপুর ঘুরে যেতে হতো, “এখন সরাসরি ফ্লাইট চালু হওয়ায়তাদের সময় ও খরচ দু-ই বাঁচাবে।”
তিনি আরও বলেন, “ফ্লাইটটি একদম চমৎকার ছিল”—বিমানবন্দরে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনার সময় এমন উৎসাহ ঝরে পড়ে তার কণ্ঠে।
চীন-কলকাতা সম্পর্কের পুরোনো সূত্র
ঔপনিবেশিক যুগ থেকে চীনা বণিকরা কলকাতায় এসে বসতি গড়েছিলেন। এখনও কলকাতা শহরের চায়নাটাউন তাংরা অঞ্চলে চীন-ভারতীয় সম্পর্কের সেই ঐতিহ্য জীবন্ত।
“আমাদের মতো যাদের আত্মীয়-স্বজন চীনে আছেন, তাদের জন্য এই সংযোগ অসাধারণ খবর,” বললেন তাংরার নাগরিক নেতা চেন খোই কুই। “এটি বাণিজ্য, পর্যটন ও মানুষে-মানুষে সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে।”
‘প্রথম ধাপ’ বলে দেখছে বিশ্লেষকেরা গত বছর রাশিয়ায় ও চলতি বছর আগস্টে চীনে মোদী-সি জিনপিংয়ের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পরই সম্পর্কে এই ‘উষ্ণতা’ ফিরেছে।
কলকাতার ব্যবসায়ী আথার আলি বললেন, “এই সরাসরি ফ্লাইট হলো সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রথম ধাপ।” চেক-ইন কাউন্টারে রিবন কেটে উদ্বোধন করা হয় বিমানের, যা ২০২০ এর পর প্রথম বার মূলভূখণ্ড চীন থেকে ভারতে সরাসরি যাত্রা।
কোভিডের আগে প্রতি মাসে প্রায় ৫০০ ফ্লাইট চলত দুই দেশের মধ্যে। তবে সেই বছরই লাদাখ সীমান্তে সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় ও ৪ জন চীনা সৈন্য নিহত হওয়ার ঘটনায় সম্পর্কে ভাঙন ধরে।
এরপর ভারত চীনা বিনিয়োগে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে ও টিকটকসহ শতাধিক অ্যাপ নিষিদ্ধ করে। দিল্লি পরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ‘কোয়াড’ জোটে (যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত) অংশ নিয়ে আঞ্চলিক-রাজনীতিতে চীনের প্রভাব রোধে সক্রিয় হয়।
দেওয়ালির মিষ্টি ও সীমান্তে হাসি দুই দেশের ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ উচ্চ-পাহাড়ি সীমান্তে এখনও সেনা অবস্থান রয়েছে, তবুও সম্প্রতি দেওয়ালি উৎসবে দুই পক্ষের সেনারা মিষ্টি বিনিময় করে “সদিচ্ছার বার্তা” পাঠিয়েছেন, বলে জানান ভারতে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র ইউ জিং।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সম্প্রতি লিখেছে—মোদী-সি বৈঠকের পর বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন “ওয়াশিংটনের জন্য একটি অর্থবহ সংকেত”। তবে পত্রিকাটি সতর্ক বার্তাও দেয়— “ক্রমবর্ধমান আত্মবিশ্বাসী চীনকে পরিচালনা করা ভারতের দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই থাকছে।” সূত্র খারিজ টাইমস
