আশুলিয়ায় ড্যাফোডিল ও সিটি ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ, বাসে আগুন
প্রকাশ: ১০:৫৯, ২৭ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১১:১৯, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৬ অক্টোবর রাতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষে সিটি ইউনিভার্সিটির একটি বাস পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী।
ঘটনার সূত্রপাত হয় রাত ৯টার দিকে। ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা তাদের ভাড়া বাসা ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস হোস্টেল’-এর পাশে বসে ছিলেন। এ সময় সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী অসর্তকভাবে থুতু ফেললে তা ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর শরীরে লাগে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। পরে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী দেশি অস্ত্র ও ইট-পাটকেল নিয়ে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের ওই বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।
এ ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন। একপর্যায়ে তাঁরা সিটি ইউনিভার্সিটির দিকে অগ্রসর হন। উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন। তাঁরা সিটি ইউনিভার্সিটির প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
এই উত্তেজনার মধ্যে সিটি ইউনিভার্সিটি সংলগ্ন এলাকায় পৃথক একটি স্থানে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। পরে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ঢোকেন। তাঁরা ক্যাম্পাসে রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি বাস, একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেন। এ ছাড়া একটি বাস, দুটি প্রাইভেটকার, একটি মোটরসাইকেল, প্রশাসনিক ভবনে ভাঙচুর করা হয়।
পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, ‘অসর্তকতাবশতই সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ফেলা থুতু ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীর শরীরে লাগে। সেখানে ‘সরি’ বলার পর বিষয়টি সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু রাতে এসে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের মেসে ভাঙচুরের ঘটনাটি কাম্য নয়। উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধানের।’
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রক্টর শেখ মুহাম্মদ আলিয়ার বলেন, ‘এখনো আমাদের ৯ জন শিক্ষার্থীকে সিটি ইউনিভার্সিটিতে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধানের। এ ঘটনায় ড্যাফোডিলের প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।’
সিটি ইউনিভার্সিটির প্রক্টর অধ্যাপক আবু জায়েদ বলেন, ‘ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, সেটি এখনো আমরা নিশ্চিত নই। ছাত্রদের মারামারি থেকে ক্যাম্পাস পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা হতে পারে না। এটি পরিকল্পিত। আমাদের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।’
এ ঘটনায় উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন পরিস্থিতি শান্ত করতে কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এ ধরনের ঘটনা শিক্ষাঙ্গনে সহিংসতার পরিবেশ সৃষ্টি করে, যা শিক্ষার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়।
এ ঘটনায় উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত পরিস্থিতি সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এদিকে, আশুলিয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। তবে, উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা এখনও বিরাজ করছে। পুলিশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এই সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। তাঁরা দাবি করছেন, প্রশাসন যেন দ্রুত দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা নেয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
এছাড়া, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে যাতে শিক্ষাঙ্গনে সহিংসতা রোধ করা যায়।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে শান্তি ও সহনশীলতা বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ধরনের ঘটনা শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা সৃষ্টি করে, যা শিক্ষার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। সুতরাং, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়।
