সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

| ১২ কার্তিক ১৪৩২

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ আজ জমা দেওয়ার সম্ভাবনা

সমাজকাল ডেস্ক 

প্রকাশ: ১০:০৯, ২৭ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১০:৫৫, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ আজ জমা দেওয়ার সম্ভাবনা

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে প্রায় চূড়ান্ত করেছে জুলাই জাতীয় সনদ। দেশের সংবিধান ও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এই পদক্ষেপ নিয়ে নানা মহলে উৎসাহ এবং আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। সূত্রের খবর, আজ ২৭ অক্টোবর কমিশন সুপারিশটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিতে পারে। সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা দেশের সংবিধান সংস্কারের প্রক্রিয়ায় আইনি ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হবে।

সুপারিশ অনুযায়ী, প্রথমে একটি বিশেষ আদেশ জারি করা হবে, যার অধীনে হবে ‘জুলাই সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’। এই আদেশের মাধ্যমে দেশের জনগণকে গণভোটে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে। আদেশের পরিশিষ্টে সনদে অন্তর্ভুক্ত ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। এর মধ্যে ৪৭টি প্রস্তাব সরাসরি সংবিধান সংশ্লিষ্ট। সনদ বাস্তবায়নের পরবর্তী ধাপে আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা পালন—সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ—কার্যকর করার ক্ষমতা দেওয়া হবে।

কমিশন সূত্র জানায়, গণভোটের প্রক্রিয়ায় কোনো রাজনৈতিক দলের ভিন্নমত উল্লেখ করা হবে না। অর্থাৎ, যে প্রস্তাবগুলো কমিশন তৈরি করেছে, সেগুলোর ওপরই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট পেলে, কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী সনদ বাস্তবায়ন করা হবে। পাশাপাশি, পাস হওয়া সংবিধান সংশ্লিষ্ট সংস্কার প্রস্তাবের ভিত্তিতে আগামী সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশও হতে পারে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মতে, দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে বেশিরভাগের বিষয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতবৈষম্য রয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি ৭টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে ভিন্নমত প্রকাশ করেছে। এছাড়া, অন্যান্য দলেরও কিছু প্রস্তাবের বাস্তবায়ন নিয়ে পার্থক্য রয়েছে। সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া তাই রাজনৈতিক সংলাপ এবং ঐক্যমত্যের উপর নির্ভর করছে।

গত রোববার, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে সনদ বাস্তবায়নের খসড়া সুপারিশ প্রায় ৯০ শতাংশ চূড়ান্ত করেছে। আজ সকালে কমিশন পুনরায় বৈঠক করে সুপারিশ চূড়ান্ত করবে এবং দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

সূত্র জানায়, সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশের খসড়া তৈরি করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা আইনি, প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক দিকগুলো বিশ্লেষণ করেছেন।

সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা অনুযায়ী, আদেশ জারির পরে দেশের জনগণকে গণভোটে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে। আদেশের অধীনে গণভোট আয়োজন করা হবে এবং ভোটারদের প্রশ্ন থাকবে—‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ অনুমোদন করেন?’ এবং ‘আপনি কি সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চান?’। গণভোটে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো আগামী সংসদে ২৭০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। এই সময়ে সংসদ নিয়মিত কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবেও কাজ করবে।

ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, আদেশের কিছু ধারা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে এবং কিছু ধারা ধাপে ধাপে প্রয়োগ করা হবে। আদেশের কোন ধারা কবে কার্যকর হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। তবে আদেশে কোনো দলের ভিন্নমতের বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে না।

কমিশন আরও একটি বিকল্প পদ্ধতি সুপারিশ করতে পারে। এতে সংস্কার প্রস্তাবগুলোকে একটি বিল আকারে উপস্থাপন করে গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদনের ব্যবস্থা করা হতে পারে। সূত্র জানায়, বিকল্প পদ্ধতিতে গণভোটের বিষয়টি আলাদা উপস্থাপন করা হতে পারে, তবে মূল কাঠামো প্রায় একই থাকবে।

গণভোটের বিষয়টি রাজনৈতিক ঐক্যমত্য থাকলেও, ভোট কখন হবে, কিভাবে অনুষ্ঠিত হবে এবং ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে—এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত সরকারের ওপর নির্ভর করবে। এছাড়া, আদেশ রাষ্ট্রপতি জারি করবেন কি প্রধান উপদেষ্টা, তা নিয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর থাকবে।

যদি গণভোটে সংস্কার প্রস্তাব পাস হয়, আগামী সংসদে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। উচ্চকক্ষের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ নির্বাচনের আগে হবে, কিন্তু উচ্চকক্ষ গঠন হবে আগামী সংসদে প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর। সংসদে প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে দলগুলো উচ্চকক্ষের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে। গণভোটে কোনো ভিন্নমতের উল্লেখ না থাকায়, উচ্চকক্ষ পিআর পদ্ধতিতে গঠিত হবে। অর্থাৎ, জাতীয় নির্বাচনে একটি দল যেভাবে ভোট পাবে, অনুপাতে তা উচ্চকক্ষে আসন পাবে।

সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ মূলত আটকে ছিল বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা প্রশ্নে। কমিশনের সূত্র জানায়, গণভোটে সংস্কার প্রস্তাব পাস হলে তা আগামী সংসদে বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। কমিশন ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকারকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ২৭০ দিনের মধ্যে সনদ বাস্তবায়ন না হলে সংসদ বিলুপ্ত করা বা কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে ইতিবাচক বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী হবে। সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। এছাড়া, উচ্চকক্ষ গঠনের মাধ্যমে পার্লামেন্টের কার্যক্রম আরও গতিশীল এবং অংশগ্রহণমূলক হবে।

অধিকাংশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও শিক্ষাবিদরা বলছেন, সনদ বাস্তবায়নের এই প্রক্রিয়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবল সংবিধান সংশোধনের বিষয় নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোর দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে ভোটাধিকার, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব এবং সংসদীয় কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ আরও নিশ্চিত হবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আশা করছে, সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা দ্রুত প্রক্রিয়াজাত হবে এবং আগামী নির্বাচনের আগে সনদ বাস্তবায়নের পথ সুগম হবে। এতে দেশের সংবিধান সংস্কারের প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুপারিশটি দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি শক্তিশালী সংবিধানিক ভিত্তি তৈরি করবে।

সারসংক্ষেপে বলা যায়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ আজ জমা দেওয়ার সম্ভাবনা রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও আইনগত ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা করবে। আদেশ জারির মাধ্যমে গণভোট আয়োজন, প্রস্তাব পাস হলে সংসদে তা বাস্তবায়ন এবং উচ্চকক্ষ গঠন—এই সব ধাপ দেশের সংবিধান ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একটি নতুন অধ্যায় যোগ করবে। কমিশনের সুপারিশের প্রতিটি ধাপ বাস্তবায়িত হলে, তা দেশের জন্য স্থায়ী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।

এদিকে, জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আমরা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। কমিশন আশা করছে, আজ ২৭ অক্টোবরের মধ্যেই সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়ার সম্ভব হবে।

সম্পর্কিত বিষয়:

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

নিউইয়র্কে আগাম ভোটে এগিয়ে মুসলিম মেয়রপ্রার্থী মামদানি
কার্যক্রম চলমান থাকবে, নভেম্বরের মধ্যে শেষ নয়
দুই দশক পর ঢাকায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান জেইসি বৈঠক শুরু
নয়াদিল্লি-বেইজিং উষ্ণতায় ফিরছে চালু হলো ভারত -চীন সরাসরি ফ্লাইট
উত্তরা থেকে মতিঝিল পুরো পথে মেট্রোরেল আবার চালু
গাজা উপত্যকায় নিহত জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারে মিশর–রেড ক্রসের অভিযান
ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ আজ করবে
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ আজ জমা দেওয়ার সম্ভাবনা
আশুলিয়ায় ড্যাফোডিল ও সিটি ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ, বাসে আগুন
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত, সোমবার জমা
ডিসেম্বরে ঢাকায় আসছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী
নভেম্বরে ওমরাহ শেষে দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান
‘জুলাই শহীদদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি’
বার কাউন্সিল পরীক্ষার ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৭৯১৭
জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না: আখতার হোসেন
মেট্রোরেল দুর্ঘটনা: নিহতের পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা