গাজা উপত্যকায় নিহত জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারে মিশর–রেড ক্রসের অভিযান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১১:০৯, ২৭ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১১:১০, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
গাজা উপত্যকায় নিহত ইসরায়েলি জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারে মিশর ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) যৌথভাবে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। ইসরায়েল সরকার নিশ্চিত করেছে, তাদের অনুমতিতেই দলগুলো গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনুস হয়ে প্রবেশ করেছে।
এই প্রথমবারের মতো ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) নিয়ন্ত্রিত এলাকাতেও মিশরীয় টিমকে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে, যা তথাকথিত “হলুদ রেখা” বা ইয়েলো লাইন–এর ওপারে অবস্থিত। ওই সীমারেখার ভেতরেই চলছে জিম্মিদের মরদেহ অনুসন্ধান কার্যক্রম।
রবিবার ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, হামাসের সদস্যরাও এবার আইসিআরসি দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছে তল্লাশি অভিযানে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় করা যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে হামাস ইতোমধ্যে ২৮ জন মৃত জিম্মির মধ্যে ১৫ জনের মরদেহ হস্তান্তর করেছে। বাকি মরদেহগুলোর খোঁজে তারা এখন মিশরীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করছে।
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি ও কূটনৈতিক তৎপরতা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামাসকে সতর্ক করে বলেছেন, “মরদেহগুলো দ্রুত ফেরত না দিলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।”
তিনি নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “কিছু মরদেহ হয়তো ধ্বংসস্তূপের নিচে, কিন্তু অনেকগুলো সহজেই ফেরত দেওয়া সম্ভব। কেন দেরি করা হচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে না।”
ইসরায়েলি মুখপাত্র বলেছেন, মিশরীয় টিম আইসিআরসি’র সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে এবং ভারী যন্ত্রপাতি যেমন এক্সক্যাভেটর ও ট্রাক ব্যবহার করে মরদেহ উদ্ধারের কাজ চালাবে।
গাজা শান্তি চুক্তি ও আন্তর্জাতিক বাহিনীর আলোচনায় নতুন মোড়
মিশর, কাতার ও তুরস্ক “ট্রাম্প–মধ্যস্থ গাজা শান্তিচুক্তি”-এর প্রধান স্বাক্ষরকারী দেশ। ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজায় নিরাপত্তা রক্ষায় যে আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠন করা হচ্ছে, তাতে কারা অংশ নেবে তা তারাই নির্ধারণ করবে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, “ইসরায়েল নিজের নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ নিজেই রাখবে। কোনো বিদেশি বাহিনী অনুমোদনের বাইরে যাবে না।”
অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, “বেশ কয়েকটি দেশ গাজা নিরাপত্তা বাহিনীতে অংশ নিতে আগ্রহী,” যদিও ইসরায়েল তুরস্কের অংশগ্রহণে আপত্তি জানিয়েছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
দুই বছরের ধ্বংসস্তূপে গাজা, চ্যালেঞ্জে উদ্ধার অভিযান
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, টানা দুই বছরের বোমা হামলায় গাজার ৮৪ শতাংশ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হামাস বলছে, বহু জিম্মির মরদেহ ভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচে আটকে আছে, ফলে উদ্ধার অভিযান কঠিন হয়ে পড়েছে।
আইসিআরসি বলেছে, তারা মানবিক কারণে এই মিশনে কাজ করছে এবং মরদেহগুলো উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে পৌঁছে দিতে চায়। গাজায় এই প্রথমবার মিশরীয় ভারী যন্ত্রপাতি প্রবেশ করেছে, যা উদ্ধার প্রক্রিয়ায় নতুন অধ্যায় খুলে দিয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন এক হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নাগরিক নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল যে সামরিক অভিযান শুরু করে, তাতে এখন পর্যন্ত গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী ৬৮ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
-
