আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’
কী হতে পারে মঙ্গলবার সন্ধ্যা-রাতে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪:৪৫, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ আগামীকাল মঙ্গলবার ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল অতিক্রম করে স্থলভাগে প্রবেশ করবে। যদিও বাংলাদেশে এর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূল থেকে অনেক দূরে। ফলে বাংলাদেশের দিকে বাতাস কম। তবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এর প্রভাবে আগামীকাল মঙ্গলবার রাত থেকে দেশজুড়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলে কিংবা বন্দরে বাতাসের গতি কম থাকলেও গভীর সাগরে বাতাসের গতি বেশি। তাই জেলেদের গভীর সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে আবহাওয়া অফিস বিশেষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ আজ (২৭ অক্টোবর) দিবাগত রাত ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৬০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এটি আরো পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে। এটি ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যা বা রাতের মধ্যে ভারতের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
এতে আরো বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত
সোমবার সকালে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক স্বাক্ষরিত ৫ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’র কারনে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
প্রভাব থাকবে ৪ দিন
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশে আঘাত না হানলেও এর প্রভাব থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ।
সোমবার (২৭অক্টোবর) এই আবহাওয়াবিদ লাশ তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে জানান, ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের স্থলভাগে আঘাত করার পরে দুর্বল হয়ে লঘুচাপ আকারে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ার আশংকা করা যাচ্ছে। ফলে সোমবার থেকে বাংলাদেশ আকাশে মেঘের উপস্থিতি লক্ষ করা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও লিখেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করার কোনো সম্ভাবনা এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে না। তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বাংলাদেশের উত্তর ও পশ্চিম দিকের পাঁচটি বিভাগের (খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট) জেলাগুলোর ওপরে ২০ থেকে ৬০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ছাড়া অবশিষ্ট তিন বিভাগের (ঢাকা, বরিশাল ও চট্রগ্রাম) জেলাগুলোর ওপরে ১০ থেকে ৩০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, সোমবার থেকে ভারতের পশ্চিম রাজ্য ও বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের উপকূলীয় এলাকার সমুদ্র উত্তাল অবস্থা বিরাজ করার আশংকা করা যাচ্ছে। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া সকল জেলাকে আজকেই উপকূলে ফেরার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার ও বুধবার বাংলাদেশের সকল উপকূলীয় এলাকার সমুদ্রে উত্তাল অবস্থা বিরাজ করতে পারে।
