জাতিসংঘ পানি কনভেনশন
ন্যায্য পানি বণ্টনে বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান বাংলাদেশের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭:০২, ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৭:০৩, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ পানি কনভেনশনের যৌথ সভায় আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর ন্যায্য ব্যবহারে বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের টিকে থাকার জন্য আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা অপরিহার্য। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জাতিসংঘ পানি কনভেনশনে সদস্যপদ টেকসই পানি ব্যবস্থাপনায় গঠনমূলক আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা বাড়াবে।
সোমবার (১৩ অক্টোবর), জাতিসংঘ পানি কনভেনশনের অধীনে ‘ইন্টিগ্রেটেড ওয়াটার রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট’ ও ‘মনিটরিং অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট’ বিষয়ক ষষ্ঠ যৌথ সভায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে নদীর সম্পর্ক অবিচ্ছিন্ন। আমাদের নদী শুধু প্রাকৃতিক উৎস নয়, এটি জীবন ও জীবিকার অনন্য মাধ্যম।”
সভায় রিজওয়ানা হাসান জানান, বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম নদীবাহিত বদ্বীপ—গঙ্গা-পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও সুরমা-মেঘনা অববাহিকার মিলনে গঠিত। দেশের মোট পৃষ্ঠ জলের ৯০ শতাংশের বেশি আসে সীমান্তের বাইরে থেকে। নিম্নগতি প্রবাহী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর ন্যায্য ও যুক্তিসংগত ব্যবহার, অংশগ্রহণ এবং ‘কোনও ক্ষতি না করার’ নীতির পক্ষে কথা বলছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও যৌথ নদী কমিশন গঠনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে অববাহিকাভিত্তিক আঞ্চলিক সহযোগিতা এখনও নীতিগত প্রধান লক্ষ্য হিসেবে রয়ে গেছে।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের ঐতিহাসিক রায়- যেখানে দেশের সব নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ বা ‘আইনগত সত্তা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে- উল্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এটি বিশ্বে পরিবেশগত ন্যায়বিচারের এক অনন্য উদাহরণ।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ নদী রক্ষায় বিস্তৃত নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করেছে, তবে বাস্তবায়নে আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। এজন্য সরকার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, তথ্য ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা উন্নয়ন, এবং শিল্প ও গৃহস্থালি দূষণ, লবণাক্ততা ও প্রবাহ হ্রাস মোকাবিলায় অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
তিনি আরও জানান, সরকার দেশজুড়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিরূপণ করছে, এবং ইতোমধ্যে দুইটি অঞ্চলকে ‘পানি সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ চলছে, যাতে নিরাপদ পানীয় জলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাংলাদেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পানি ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু সহনশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
এসসময় সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।