চীনা প্রভাব ঠেকাতে প্রশান্ত মহাসাগরে নতুন নিরাপত্তা জোট
অস্ট্রেলিয়া–পাপুয়া নিউগিনির ‘পুকপুক চুক্তি’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২:২৬, ৬ অক্টোবর ২০২৫
ছবি : জাপান টাইমস থেকে
অস্ট্রেলিয়া ও পাপুয়া নিউগিনি (পিএনজি) সোমবার ক্যানবেরায় এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশ পরস্পরের সামরিক ঘাঁটি, সেনা ও অবকাঠামো ব্যবহারের অধিকার পাবে। চুক্তির আওতায় এক দেশ আক্রান্ত হলে অন্য দেশ ‘সহযোগিতায়’ এগিয়ে আসবে—এমন প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।
চুক্তিটির নাম রাখা হয়েছে ‘পুকপুক ট্রিটি’ (Pukpuk Treaty)—পিএনজি পিজিন ভাষায় পুকপুক শব্দের অর্থ কুমির। এতে বলা হয়েছে, যে কোনো সশস্ত্র হামলা উভয় দেশের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক বিবেচিত হবে এবং উভয় পক্ষকে যৌথভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি মূলত চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয়ার কৌশলের অংশ। লাওয়ি ইনস্টিটিউটের গবেষক অলিভার নোবেতাউ বলেন, “চুক্তিটি নিশ্চিত করেছে যে চীন পিএনজিতে সেই রকম অবকাঠামোগত বা সামরিক উপস্থিতি পাবে না, যেটি তারা অন্যান্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপে পেয়েছে।”
অস্ট্রেলিয়া সম্প্রতি ভানুয়াতু, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও টুভালুর সঙ্গে অনুরূপ নিরাপত্তা চুক্তি করেছে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে পশ্চিমা জোট—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড—প্রশান্ত মহাসাগরে চীনা উপস্থিতি প্রতিহত করতে চাইছে।
১০ হাজার পিএনজি নাগরিকের জন্য নতুন সুযোগ
চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ১০ হাজার পর্যন্ত পাপুয়া নিউগিনিয়ান নাগরিক অস্ট্রেলিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারবেন এবং পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগও থাকবে। নোবেতাউ বলেন, “অস্ট্রেলিয়ার সেনাবাহিনীতে জনবল সংকট রয়েছে, আর পিএনজিতে কর্মক্ষম তরুণদের আধিক্য—এটি উভয়ের জন্যই লাভজনক।”
পিএনজি প্রধানমন্ত্রী জেমস মারাপে বলেন, এই চুক্তি “ভূরাজনীতি নয়, বরং পারস্পরিক আস্থা ও দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের ফল।” তিনি আরও জানান, “আমরা চীনের সঙ্গে স্বচ্ছ সম্পর্ক বজায় রেখেছি এবং স্পষ্ট জানিয়েছি, অস্ট্রেলিয়াই আমাদের নিরাপত্তা অংশীদার।”
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, “এই চুক্তি আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্মের বিশ্বাসের প্রতিফলন, যা প্রশান্ত মহাসাগরকে শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ রাখতে সাহায্য করবে।”
চুক্তিতে যৌথ সামরিক মহড়া, সাইবার ও ইলেকট্রোম্যাগনেটিক যুদ্ধক্ষেত্রে সহযোগিতা, এবং সেনাদের পূর্ণ ইন্টিগ্রেশনের (সম্পৃক্ততা) বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পিএনজির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিলি জোসেফ জানান, “এখন থেকে দুই দেশের সেনাবাহিনী সম্পূর্ণভাবে সমন্বিতভাবে কাজ করবে।”
নিউজিল্যান্ডের ম্যাসি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আনা পাওলেস বলেন, “এটি পিএনজির সেনাবাহিনীর জন্য প্রযুক্তি ও মনোবলে বড় উত্থান ঘটাবে।” তবে তিনি সতর্ক করে দেন, “চুক্তিটি পিএনজির দীর্ঘদিনের পররাষ্ট্রনীতি—‘সবাই বন্ধু, কারো শত্রু নয়’—এর সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।”
পিএনজির সাবেক প্রতিরক্ষা প্রধান জেরি সিঙ্গিরক চুক্তির সমালোচনা করে বলেছেন, “অস্ট্রেলিয়া চীনকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করলেও চীন পিএনজির শত্রু নয়; তাই এই চুক্তি দেশের জন্য ব্যয়বহুল হতে পারে।”
‘পুকপুক ট্রিটি’ প্রশান্ত মহাসাগরের ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় এক নতুন অধ্যায়। চুক্তিটি যেমন অস্ট্রেলিয়াকে চীনা প্রভাব ঠেকাতে এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে, তেমনি পাপুয়া নিউগিনিকে দিয়েছে সামরিক ও অর্থনৈতিক সুযোগের নতুন দিগন্ত। তবে আঞ্চলিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এখন পিএনজির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে। সূত্র : জাপান টাইমস
