২২ বছর পর ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের শোধ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০০:৩৫, ১৯ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০১:১২, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
ছবি : সংগৃহীত
একটি জয়ের জন্য কী দীর্ঘ অপেক্ষা! ২২ বছর আগে ভারতের বিপক্ষে জয়ের পর আরও ১০ বার মুখোমুখি হয়েও গোলশূন্য ফিরতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত জয় এলো আবারও সেই একই মাঠে—ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাতে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে বাংলাদেশ ১-০ গোলে হারিয়েছে ভারতকে।
ম্যাচের ১২ মিনিটেই আসে একমাত্র গোল। রাকিবের দারুণ ক্রস থেকে নিখুঁত ভলিতে গোল করেন মোরসালিন। সেই গোলটাই পুরো ম্যাচে ধরে রেখেছে বাংলাদেশকে—যেখানে অবদান রাখেন ইংলিশ লিগ থেকে আগত বাংলাদেশি ফুটবলার হামজা চৌধুরী। আক্রমণ, রক্ষণ, বল দখল—সব জায়গায় ছিল তার আধিপত্য। সত্যিই, ম্যাচটি ছিল ‘হামজাময়’।
২৫ মার্চ শিলংয়ে ভারতের সঙ্গে ড্র করা বাংলাদেশ এবার ঘরের মাঠে জয়ে ফিরল। পাঁচ ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৫।
এই ম্যাচটি দুই দলের জন্যই টুর্নামেন্ট-নির্ণায়ক ছিল না; কারণ দু’দলই আগেই বাছাই থেকে ছিটকে গেছে। তবু মর্যাদার লড়াই বলে উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। আর সেই লড়াইয়ে এগিয়ে থেকে ম্যাচ শেষ করল বাংলাদেশ।
আগে গোল দিয়ে শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে ম্যাচ হাতছাড়া করার নজির বহুবারই দেখেছে লাল-সবুজ। তাই মোরসালিনের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর সমর্থকদের মনে শঙ্কা ছিল প্রবল। চারদিন আগেই নেপালের বিপক্ষে হামজার জোড়া গোলের পর শেষ সময়ে গোল হজম করে ড্র করতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। তবে ভারতের বিপক্ষে সেই শঙ্কা বাস্তব হয়নি। রক্ষণভাগ ছিল জমাট, গোলরক্ষক মিতুলও ছিলেন আত্মবিশ্বাসী।
ম্যাচের শুরু থেকেই ভারত আক্রমণে ছিল আগ্রাসী। কিন্তু ১২ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে রাকিব দুরন্ত গতিতে তিনজনকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে বাঁ দিক থেকে যে ক্রসটি বাড়ান, তাতে মোরসালিন নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন। ভারতীয় গোলরক্ষক এগিয়ে এলেও তা রোখা সম্ভব হয়নি—বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ১-০ ব্যবধানে।
এরপর সমতা ফেরাতে মরিয়া হয়ে ওঠে ভারত। দূরপাল্লার শট, কর্নার, বক্সের ভিড়ে একের পর এক চেষ্টা—কিন্তু প্রতিবারই বাধা হয়ে দাঁড়ান হামজা, কিংবা গোলরক্ষক মিতুল। গোললাইনে দাঁড়িয়ে অন্তত দু’বার নিশ্চিত গোল বাঁচান হামজা চৌধুরী। বক্সের বাইরে থেকে তাঁর নেওয়া এক শট অল্পের জন্য পোস্ট মিস করে।
৩৩ মিনিটে একটি ফাউলকে কেন্দ্র করে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মাঠে ধাক্কাধাক্কির পরিস্থিতি তৈরি হয়। রেফারি বাংলাদেশের তপু বর্মণ ও ভারতের নারাভি নিখিলকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এর আগে ইনজুরিতে ২৭ মিনিটেই মাঠ ছাড়েন তারিক কাজী। তাঁর জায়গায় নামেন তরুণ ডিফেন্ডার শাকিল আহাদ তপু।
গত ২৫ মার্চ শিলংয়ের ম্যাচ দিয়েই বাংলাদেশ দলে অভিষেক হয়েছিল লেস্টার সিটির ফুটবলার হামজা দেওয়ান চৌধুরীর। দ্বিতীয় ম্যাচেই পেলেন তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আলোচিত ও স্মরণীয় জয়। এটি ছিল তার সপ্তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ—নিশ্চয়ই ‘লাকি সেভেন’।
বাংলাদেশ গত দুই আসরের এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে কোনো জয় পায়নি। এবারও শুরুতে চার ম্যাচ গোলশূন্য থেকে হতাশা ছিল গভীর। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে এই জয় বদলে দিল পরিবেশ। ২২ বছর পর আবারও ভারতকে হারালো বাংলাদেশ—এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের প্রথম জয়।
এই এক গোল, এই এক জয়—কেবল পরিসংখ্যান নয়; দীর্ঘ অপেক্ষার তৃপ্তি, গর্ব আর আত্মবিশ্বাসেরও নাম।
