সতর্কবার্তার ভিডিও দেওয়ার পরও খুন হলেন জহির
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২:৪৫, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
খুন হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন বিএনপি নেতা আবুল কালাম জহির / ফাইল ছবি
লক্ষ্মীপুরে খুন হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন বিএনপি নেতা আবুল কালাম জহির। আশঙ্কা প্রকাশের মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানেই সত্যি ঘটে গেল সেই ভয়—গত শনিবার রাতে সন্ত্রাসীরা গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করেছে তাকে। মৃত্যুর দুই দিন পর সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাতে তার ধারণ করা ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
৩৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিও বার্তায় আবুল কালাম স্পষ্টভাবে বলেন, তার মৃত্যুর জন্য ১১ জনকে দায়ী করা হবে। এদের মধ্যে ছিলেন কাউছার মানিক ওরফে ছোট কাউছার—যিনি বর্তমানে হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত। ভিডিওতে আবুল কালামের মুখে শোনা যায়, “যদি আমার মৃত্যু হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।”
স্থানীয়দের মতে, ভিডিওর ভাষা, ভঙ্গি এবং অভিযোগ থেকে স্পষ্ট—তিনি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন, তাকে টার্গেট করা হয়েছে। স্বজনদের দাবি, জীবননাশের আশঙ্কা থেকেই তিনি মুঠোফোনে ভিডিওটি ধারণ করেছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের পর আরও চাঞ্চল্য ছড়ায় যখন দেখা যায়, ঘটনা ঘটার প্রায় আধা ঘণ্টা পর অভিযুক্ত কাউছার মানিক নিজের ফেসবুক আইডিতে ‘আউট’ ক্যাপশন দিয়ে একটি ক্রিকেট খেলার ভিডিও পোস্ট করেন। নিহতের পরিবার দাবি করেছে, এই পোস্টই হত্যায় তার সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত দেয়। মামলায় কাউছারকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
আবুল কালাম ছিলেন চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।
শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে মোস্তফার দোকান এলাকায় সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। অভিযুক্ত কাউছার স্থানীয় ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও তার কোনো আনুষ্ঠানিক পদ নেই। এলাকায় দখল-বাজি, আধিপত্য বিস্তার ও বিভিন্ন অপরাধে তার জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আগে থেকেই আবুল কালামের সঙ্গে তাঁর বিরোধ চলছিল।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কাউছার মানিক ওরফে ছোট কাউছারসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও অজ্ঞাত কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী আইরিন আক্তার।
লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন বলেন, ভিডিওটি পুলিশের হাতে এসেছে এবং এটি মামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও জানান, ভিডিওটি খুনের কয়েক দিন আগে রেকর্ড করেছিলেন বলে নিহতের স্ত্রী জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।
