উখিয়ায় বৈদ্যুতিক শকে বন্য হাতির মৃত্যু
টেকনাফ-উখিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫:২৬, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
শকে বন্য হাতির মৃত্যু। ছবি: সমাজকাল
কক্সবাজারের উখিয়ায় আবারও ঘটল বন্যপ্রাণী হত্যার নির্মম ঘটনা। রাজাপালং ইউনিয়নের খয়রাতি পাড়ায় ফসল রক্ষায় পাতা অবৈধ বৈদ্যুতিক ফাঁদে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একটি পূর্ণবয়স্ক বন্য হাতি নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) ভোরে স্থানীয়রা ফাঁকা মাঠে পড়ে থাকা বিশাল দেহ দেখতে পেয়ে বন বিভাগকে খবর দিলে একটি বিশেষ টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে তদন্ত শুরু করে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাতের শেষভাগে খাবারের সন্ধানে হাতিটি লোকালয়ে চলে আসে। সকালে ঘর থেকে বের হয়ে তাঁরা প্রথমে অচল এক বিশাল বস্তু লক্ষ্য করেন। কাছে গিয়ে বুঝতে পারেন—এটি একটি মৃত হাতি। মুহূর্তেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে শোকের ছায়া ও ক্ষোভের স্রোত।
অনেকেই বলেন—“ফসল বাঁচাতে মানুষ যে পদ্ধতি ব্যবহার করছে তা সরাসরি প্রাণহানির কারণ হচ্ছে। এটি অমানবিক ও বিপজ্জনক।”
ঘটনাস্থলে পৌঁছে বন বিভাগের কর্মকর্তারা পায়ের ছাপ, তারের অবশিষ্টাংশ, ক্ষতচিহ্নসহ আশপাশের পরিবেশ পরীক্ষা করেন। তাদের ধারণা—কারেন্টযুক্ত জাল বা ফাঁদে স্পর্শ করেই হাতিটির মৃত্যু হয়েছে।
বন বিভাগ জানায়:মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত করতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে,প্রয়োজনে ময়নাতদন্ত হবে।কারা বৈদ্যুতিক ফাঁদ পাতল—সেটি শনাক্তে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।
উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন,“হাতির মৃত্যুর খবর পেয়েছি। মিটিংয়ে থাকায় বিস্তারিত পরে জানাতে পারবো।”
প্রাণী সুরক্ষা সংগঠন ও পরিবেশবিদরা এ ঘটনাকে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে—বৈদ্যুতিক ফাঁদ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য সমাধান নয়, এতে শুধু বন্যপ্রাণী নয়, মানুষও ঝুঁকিতে পড়ে।
তারা বলেন, বনভূমি সংকোচন, জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্যাভাবে হাতিরা লোকালয়ে ঢুকে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন—“হাতি–মানুষ সংঘাত কমাতে বাফার জোন, হাতির চলাচলের পথ পুনরুদ্ধার, সৌরচালিত নিরাপদ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং স্থানীয়দের সচেতনতা জরুরি।”
স্থানীয়দের অভিযোগ—ফসল ও বাগান নষ্ট হলেও প্রাণহানি রোধে সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদ্যোগ যথেষ্ট নেই। তাঁরা নিরাপদ ফসল রক্ষা প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছেন।
বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুসারে—ইচ্ছাকৃত বা অবহেলায় বন্যপ্রাণী হত্যার শাস্তি অর্থদণ্ড থেকে কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, দোষীদের শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাতিটির মৃত্যুতে পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবাই ক্ষোভ ও দুঃখ নিয়ে ঘটনাস্থলে জড়ো হয়েছেন।
স্থানীয়রা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও উদাহরণযোগ্য শাস্তি দাবি করেছেন।
