মৌমাছির জন্য ‘সুপারফুড’
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১২:৫৭, ২১ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৪:৩৬, ২১ আগস্ট ২০২৫

বিজ্ঞানীরা এমন এক ধরনের মৌমাছির “সুপারফুড” তৈরি করেছেন যা জলবায়ু পরিবর্তন ও বাসস্থান ধ্বংসের মতো হুমকি থেকে মৌমাছিদের রক্ষা করতে পারে।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, যেসব মৌচাকে এ খাবার দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় ১৫ গুণ বেশি বাচ্চা মৌমাছি পূর্ণবয়সে পৌঁছেছে।
মৌমাছি বিশ্ব খাদ্য উৎপাদনের একটি অপরিহার্য অংশ, কারণ তারা বিশ্বের ৭০% প্রধান কৃষিপণ্য পরাগায়ণে ভূমিকা রাখে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেরালডিন রাইট বিবিসিকে বলেন—
“এই প্রযুক্তিগত সাফল্য মৌমাছিদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টি সরবরাহ করে। ফলে যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে পরাগ (pollen) থাকে না, তখনও তাদের খাওয়ানো সম্ভব।”
মৌমাছির সংকট
বিশ্বজুড়ে মৌমাছির সংখ্যা মারাত্মক হারে কমছে।
কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে—
পুষ্টির ঘাটতি
ভাইরাসজনিত রোগ
জলবায়ু পরিবর্তন
অন্যান্য পরিবেশগত চাপ
শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই গত এক দশকে বার্ষিক মৌচাক ক্ষতির হার ছিল ৪০-৫০%। যুক্তরাজ্যের মৌমাছি পালনকারীরাও মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
দক্ষিণ ওয়েলসের মৌমাছি পালনকারী নিক মেনসিকভ বলেন—
“গত শীতে আমি আমার ৭৫% মৌচাক হারিয়েছি। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মৌমাছিরা টিকে থাকলেও এরপর তারা হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যায়।”
পুষ্টির ঘাটতি ও নতুন উদ্ভাবন
মৌমাছিরা ফুলের পরাগ ও মধুরস (nectar) খেয়ে থাকে। এগুলোতে থাকে স্টেরল নামের এক ধরনের লিপিড, যা তাদের বিকাশের জন্য জরুরি।
শীতকালে যখন ফুল ফোটা বন্ধ হয়, তখন মৌচাকে জমা মধুই তাদের খাবার। কিন্তু মধু ব্যবসায়িকভাবে সংগ্রহ করা হলে কিংবা প্রকৃতিতে পরাগ কমে গেলে, মৌচাষিরা বিকল্প খাবার দেয়।
তবে সেই খাবার সাধারণত প্রোটিনের গুঁড়া, চিনি ও পানি দিয়ে তৈরি—যাতে মৌমাছির প্রয়োজনীয় পুষ্টি থাকে না। ঠিক যেমন মানুষকে শর্করা, অ্যামিনো অ্যাসিড বা জরুরি পুষ্টি বাদ দিয়ে খাওয়ানো।
স্টেরল তৈরি করা সবসময়ই কঠিন ছিল। কিন্তু অধ্যাপক রাইট ও তার দল ১৫ বছর গবেষণা করে মৌমাছির জন্য প্রয়োজনীয় ছয় ধরনের স্টেরল শনাক্ত করেন এবং তা তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরিতে গবেষকরা রান্নাঘরের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এক ধরনের “কুকি-ডো” জাতীয় খাবার তৈরি করেন—যাতে সঠিক অনুপাতে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট থাকে।
সবচেয়ে বড় অগ্রগতি হলো, জিন-সম্পাদনার (gene editing) মাধ্যমে ইস্টকে এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে যাতে তা মৌমাছির জন্য প্রয়োজনীয় ছয়টি স্টেরল তৈরি করতে পারে।
পরীক্ষার ফলাফল
এই সুপারফুড টানা তিন মাস মৌচাকে খাওয়ানো হয়।
ফলাফল—
পূর্ণাঙ্গভাবে বেড়ে ওঠা বাচ্চা মৌমাছির সংখ্যা ১৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মৌমাছির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ছে এবং তারা আরও স্বাস্থ্যবান হচ্ছে।
অধ্যাপক রাইট বলেন, বিশেষ করে এমন বছরগুলোতে এটি গুরুত্বপূর্ণ যখন গ্রীষ্মকাল অস্বাভাবিকভাবে আগে শেষ হয় এবং ফুল ফোটা বন্ধ হয়ে যায়। তখন মৌমাছিরা শীত পার করতে পর্যাপ্ত পরাগ ও মধু পায় না।
গবেষকরা বলছেন, বড় আকারে মাঠপর্যায়ে পরীক্ষা করা এখন জরুরি।
সবকিছু ঠিকঠাক চললে আগামী দুই বছরের মধ্যেই এই সুপারফুড মৌচাষি ও কৃষকদের জন্য বাজারে আসতে পারে।
এই গবেষণায় অংশ নিয়েছে—University of Oxford, Royal Botanic Gardens, Kew,University of Greenwich, Technical University of Denmark