স্বর্ণের ক্যানভাসে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ কোরআন
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২১:২৬, ৫ অক্টোবর ২০২৫

ইসলামের ইতিহাসে পবিত্র কোরআনের সংরক্ষণ ও অলংকরণের যাত্রা দীর্ঘকাল ধরে চলমান। কোরআনের আয়াতসমূহকে নান্দনিকতা ও শিল্পকলার মাধ্যমে সংরক্ষণের রীতি মুসলিম বিশ্বের এক গৌরবময় অধ্যায়। এ ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে স্বর্ণের ক্যানভাসে খোদাই করে পাকিস্তানে তৈরি হচ্ছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ কোরআন শরীফ।
এই অনন্য কীর্তির নেপথ্যে রয়েছেন পাকিস্তানি চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর শাহিদ রাসাম। তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৫৫০ পাতার এই কোরআনে থাকবে প্রায় ৮০ হাজার শব্দ। প্রতিটি পাতার দৈর্ঘ্য ২ মিটার এবং প্রস্থ ২ দশমিক ৬ মিটার। প্রচলিত কালি বা রঙ ব্যবহার না করে আয়াতের শব্দগুলো ধাতু দিয়ে খোদাই করা হবে। আর কাগজের পরিবর্তে বিশেষভাবে তৈরি ক্যানভাসে এই শিল্পকর্ম আঁকা হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এর আগে বৃহৎ আকারে কোরআন শরীফ তৈরি হয়েছে। যেমন আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিশাল আকারের কোরআন প্রদর্শিত হয়েছে। তবে শাহিদ রাসামের এই উদ্যোগ ভিন্নমাত্রার। কারণ, এখানে শুধু আকারের দিক থেকেই নয়, উপকরণের দিক থেকেও অভাবনীয় এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হচ্ছে। শিল্পী জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে প্রায় দুইশ কেজি সোনা ব্যবহার করা হবে। ফলে এটি শুধু আকারে নয়, মূল্যবান উপকরণ ব্যবহারের কারণেও হয়ে উঠবে অনন্য এক নিদর্শন।
এই মহাকীর্তির কাজ শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে। ২০২৬ সালে কাজটি শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে সুরা আর-রহমানের একটি নমুনা দুবাই এক্সপোতে প্রদর্শিত হয়েছিল। বিশাল আকারে আয়াতসমূহ খোদাই করা সেই অংশ দর্শনার্থীদের অভিভূত করেছিল। অনেকেই মনে করেন, কোরআনের বাণী যেভাবে নান্দনিকতার সাথে শিল্পে প্রকাশ পেয়েছে, তা ইসলামি ঐতিহ্যের গৌরবকে নতুনভাবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরবে।
শাহিদ রাসামের মতে, কোরআনুল কারিম শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শক। তাই তিনি চেয়েছেন কোরআনের মহিমা ও সৌন্দর্যকে এমনভাবে প্রকাশ করতে, যা পৃথিবীর মানুষের সামনে ইসলামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আধ্যাত্মিকতার প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকবে। তিনি বিশ্বাস করেন, এই প্রকল্প শুধু শিল্পকর্ম নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থাকবে, যা আগামী প্রজন্মকে মুগ্ধ করবে।
এত বিশাল একটি কাজ শেষ করতে দীর্ঘ সময় ও বিপুল অর্থের প্রয়োজন। তিনি জানিয়েছেন, সরকারি ও বেসরকারি অনুদান ছাড়া এটি সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।
কোরআনের প্রতি মুসলিমদের আবেগ ও শ্রদ্ধা চিরকাল অটুট। আল্লাহর কালাম সংরক্ষণ ও মহিমা তুলে ধরার জন্য ইতিহাসে বহু প্রয়াস হয়েছে। পাথরে খোদাই, পশুর চামড়ায় লিখন, হাতের কাজের ক্যালিগ্রাফি, স্বর্ণমণ্ডিত অলংকরণ, সবই কোরআনের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। পাকিস্তানে তৈরি হতে যাওয়া এই বিশাল কোরআন সেই ঐতিহ্যের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
এই কোরআন সম্পন্ন হলে তা শুধু একটি ধর্মীয় গ্রন্থের নান্দনিক রূপ হবে না, বরং ইসলামি শিল্প ও সংস্কৃতির বৈশ্বিক ঐতিহ্যে নতুন সংযোজন ঘটাবে। মুসলমানদের গৌরবময় ইতিহাসে এটি স্মারক হয়ে থাকবে, যা প্রমাণ করবে, আল্লাহর বাণীকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে ধারণ করা মানেই কেবল পাঠ করা নয়, বরং তা হৃদয় ও শিল্প উভয়েই প্রতিফলিত করা।