তায়েফ থেকে প্রত্যাবর্তন
মক্কায় নবীজির প্রবেশে কুরাইশদের বাধা
মাইসারা জান্নাত
প্রকাশ: ১৯:৪১, ৩ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:৫০, ৩ অক্টোবর ২০২৫

আবু তালিবের মৃত্যুর পর মক্কায় নবীজি (সা.)-এর অবস্থান হয়ে ওঠে অতি দুরূহ। কুরাইশদের প্রতিহিংসা ও শত্রুতা দিন দিন বাড়তে থাকে। এই সময় ইসলাম প্রচারের আশায় তিনি গিয়েছিলেন তায়েফ নগরে। কিন্তু সেখানে তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অমানবিক আচরণের শিকার হতে হয়। রক্তাক্ত দেহে তিনি যখন মক্কার পথে রওনা হন, তখন কুরাইশরা নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা স্থির করে, নবীজি (সা.)-কে মক্কায় আর প্রবেশ করতে দিবে না। এই পরিস্থিতি ছিল নবীজির জীবনের এক অতি সংকটময় অধ্যায়।
তাই তায়েফ থেকে ফিরে নবীজি (সা.) কুরাইশদের প্রভাবশালী নেতা মুতইম ইবনে আদির সাহায্য চান। তিনি নবীজি (সা.)-এর আশ্রয় হয়ে দাঁড়ান। মুতইম মক্কার মানুষদের সামনে ঘোষণা করেন, মুহাম্মদ (সা.) তার নিরাপত্তার অধীনে মক্কায় প্রবেশ করবেন। অতঃপর মুতইম প্রকাশ্যে নবীজি (সা.)-কে নিরাপত্তা দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করান। কুরাইশদের কেউ আর বাধা দেওয়ার সাহস পায়নি। এভাবেই তিনি মুহাম্মদ (সা.)-কে মক্কায় ফেরার পথ সুগম করে দেন।
নবীজি (সা.) আজীবন এই উপকারকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন। যদিও মুতইম ইসলাম গ্রহণ করেননি এবং মুশরিক অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করেন, তবু তার ন্যায়পরায়ণতা ও দায়িত্বশীলতার প্রশংসা নবীজি (সা.) বারবার করেছেন। মদিনায় হিজরতের পর মুতইম মারা গেলে নবীজি (সা.) তার মহত্ত্ব ও সাহসিকতার কথা স্মৃতিচারণ করতেন।
বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের হাতে সত্তর জন মুশরিক বন্দী হয়েছিল। তখন নবীজি (সা.) বলেছিলেন, ‘যদি মুতইম ইবনে আদি আজ জীবিত থাকতেন এবং তাদের মুক্তির জন্য সুপারিশ করতেন, তবে আমি তাদের সবাইকে মুক্ত করে দিতাম।’ (সহিহ বুখারি) নবীজির এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তিনি কতটা গভীর কৃতজ্ঞতায় মুতইমের ঋণ স্বীকার করতেন।
মুতইম ইবনে আদি ছিলেন মক্কার একজন খ্যাতিমান নেতা। মদিনার কবি সাহাবি হাসসান ইবনে সাবিত (রা.) তার মৃত্যুতে একটি শোকগাঁথা রচনা করেছিলেন। সেখানে তিনি মুতইমের চরিত্রের দৃঢ়তা, অতিথিপরায়ণতা, ন্যায়বোধ ও দায়িত্বশীলতার প্রশংসা করেছেন। একজন মুশরিক হয়েও তার সততা ও মানবিকতার কারণে তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। (সিরাতে ইবনে কাসির)
এই ঘটনা ইসলামি শিক্ষার একটি বড় দিক তুলে ধরে। ইসলাম শুধু মুসলমানদের সাথেই নয়, অমুসলিমদের সাথেও ন্যায় ও কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনের শিক্ষা দেয়। যে কেউ সৎকর্ম করে, মানবতার কল্যাণে দাঁড়ায়, তাকে স্বীকৃতি দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে ন্যায্য।
তায়েফ থেকে নবীজি (সা.)-এর প্রত্যাবর্তনের এ ঘটনা মানবিকতার এক অনন্য শিক্ষা। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ভিন্ন ধর্মের মানুষ হলেও ন্যায়, সততা ও উপকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে। কৃতজ্ঞতা মানুষের চরিত্রকে মহৎ করে, আর অকৃতজ্ঞতা মানুষকে ছোট করে। নবীজি (সা.) আমাদের দেখিয়ে গেছেন, উপকারের ঋণ স্বীকার করা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা মুমিনের অন্যতম গুণ।