প্রবীণদের অবদান, মর্যাদা ও অধিকার
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬:০৩, ১ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৬:০৭, ১ অক্টোবর ২০২৫

আজ আন্তর্জাতিক প্রবীন দিবস। জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতিবছর ১ অক্টোবর প্রবীণদের সম্মান ও অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে এই দিবসটি পালন করা হয়। ইসলামে প্রবীণদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের সমাজের প্রবীণরা নৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের ধারক। তারা জীবনের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাদের জীবনধারায় যে ধৈর্য, ত্যাগ ও সহনশীলতা নিহিত, তা আমাদের নৈতিক শিক্ষার অন্যতম উৎস।
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে জোর তাগিদ দিয়েছেন। একবার এক ব্যক্তি নবীজি (সা.)-এর কাছে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। নবীজি (সা.) উত্তরে বলেন, যে ব্যক্তি তার বাবা-মার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, মহান আল্লাহ তার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন।
হজরত সালমান ফার্সি (রা.)-এর ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে প্রবীণদের মর্যাদা ও সমাজে তাদের অবদানকে তুলে ধরে। সালমান ফার্সি (রা.) প্রজ্ঞাবান প্রবীণ সাহাবি ছিলেন, যিনি ইসলামের শিক্ষা প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। খন্দক যুদ্ধের সময় তার পরামর্শের ভিত্তিতেই নবীজি (সা.) পরীখা খনন করেছিলেন। এতে মুসলমানরা যুদ্ধে জয়লাভ করেন। তার জীবন আমাদের শেখায়, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও নৈতিক দায়িত্ব আরও বৃদ্ধি পায়।
ইসলামে প্রবীণদের অধিকার শুধুমাত্র পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব হিসেবেও বিবেচিত। ইসলামি নীতিমালা অনুসারে প্রবীণদের জন্য যথাযথ যত্ন, সঠিক খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা ও মানসিক সমর্থন নিশ্চিত করা আবশ্যক। নবীজি (সা.)-এর হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি প্রবীণদের সম্মান করবে, আল্লাহ তাকে সমাদৃত করবেন।’ (সহিহ মুসলিম) এটি নির্দেশ করে যে, প্রবীণদের প্রতি সম্মান ও দায়িত্ব পালন ইসলামের মৌলিক নৈতিক আদর্শের অন্তর্ভুক্ত।
পরিবার ও সমাজে প্রবীণদের অবদানের স্বীকৃতি, তাদের প্রতি সহানুভূতি এবং নৈতিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সমাজকে মানবিক ও নৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করা যায়। শিশুদের কাছে তাদের শিক্ষণীয় গল্প, অভিজ্ঞতা ও নৈতিক শিক্ষার প্রয়োগ সুন্দর সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা অপরিহার্য নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। সালমান ফার্সির জীবন ও নবীজি (সা.)-এর শিক্ষা আমাদের শেখায়, বয়স্কদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে সঠিকভাবে সম্মান করা উচিত। আন্তর্জাতিক বয়স্ক ব্যক্তি দিবস আমাদের এই দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়। সমাজে বৃদ্ধদের প্রতি মর্যাদা, সহানুভূতি এবং নৈতিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নির্দেশ ও নবীজি (সা.)-এর আদর্শের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করতে পারি। এটি শুধুমাত্র সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং আধ্যাত্মিক ও নৈতিক কর্তব্য, যা আমাদের মানবিকতা ও ইসলামি মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটায়।