বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫

| ১২ ভাদ্র ১৪৩২

জলবায়ু সংকট

সততা-নির্ভর কার্বন বাজার স্থিতিশীলতা ও টিকে থাকার জন্য বিলিয়ন ডলার উন্মুক্ত করতে পারে

মোহাম্মদ নাশিদ

প্রকাশ: ০০:৩৯, ২১ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৮:০৬, ২২ আগস্ট ২০২৫

সততা-নির্ভর কার্বন বাজার স্থিতিশীলতা ও টিকে থাকার জন্য বিলিয়ন ডলার উন্মুক্ত করতে পারে

কোনো কিছুই জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্রতা এত স্পষ্টভাবে তুলে ধরে না, যতটা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১.৫ মিটার (৫ ফুট) উঁচুতে বসবাস করা আমার দেশ মালদ্বীপ করে।
কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে, মালদ্বীপসহ ক্লাইমেট ভলনারেবল ফোরামের (CVF) ৭৪টি দেশকে বিপুল অর্থের প্রয়োজন।

অর্থের কঠিন বাস্তবতা
ভালনারেবল দেশগুলির জলবায়ু কৌশল বাস্তবায়নে – প্রশমন, অভিযোজন এবং ক্ষতি-ক্ষতিপূরণের খরচ মেটাতে – ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিবছর আনুমানিক ৪৯০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। অথচ প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলির পক্ষ থেকে দেওয়া অর্থায়ন ভয়াবহভাবে অপ্রতুল।
এটি বর্তমান বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামোর এক নির্মম ব্যর্থতা, যা জলবায়ুর সম্মুখসারিতে থাকা দেশগুলির দিকে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা তখনই অর্থহীন হয়ে পড়ে, যখন এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের স্থিতিশীলতা গড়ে তোলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে, অথচ ধনী দেশগুলি অবিরাম কার্বন দূষণ ছড়িয়ে যায়।

সমাধান: কার্বন বাজার
এই প্রেক্ষাপটে, কার্বন বাজার জলবায়ু অর্থায়ন সংগ্রহের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে, যা অর্থায়নের ঘাটতি কমাতে ও জলবায়ু ন্যায্যতা অগ্রসর করতে সহায়তা করবে।
CVF–V20 (Vulnerable 20 Finance Ministers) হিসাব করছে, সঠিকভাবে পরিচালিত হলে কার্বন বাজার প্রতিবছর অতিরিক্ত ২০ বিলিয়ন ডলার উন্মুক্ত করতে পারে। এটি শুধু স্থিতিশীলতাই নয়, অর্থনৈতিক ক্ষতি হ্রাস ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে দেশগুলিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
কার্বন বাজার সম্প্রসারণ করলে জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনা (NDCs) বাস্তবায়নের খরচ অর্ধেক কমে আসবে, এবং বন সংরক্ষণ, জলাভূমি পুনরুদ্ধারসহ প্রকৃতিনির্ভর সমাধানে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে। ফলে আয়োজক দেশগুলির জন্য প্রভাব হতে পারে সাতগুণ বেশি।

সম্ভাবনা ও বাধা

অনেক V20 দেশ কার্বন শোষণ ও নিঃসরণ কমানোর বিশাল সম্ভাবনা রাখে, বিশেষত তাদের ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোষ্ণ অরণ্য রক্ষার মাধ্যমে। কিন্তু এই দেশগুলিই প্রায়শই বাজারে প্রবেশে অযোগ্য থেকে যায়—প্রযুক্তিগত জ্ঞান, নীতি ও অবকাঠামোর ঘাটতির কারণে।
ফলে তারা কার্বন বাজার থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারে না, যদিও এ সুযোগ তাদের অর্থনীতি রূপান্তরে বড় অবদান রাখতে পারত।

ঝুঁকি কমানো ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করা
ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলিকে কার্বন বাজারে ন্যায্য অবস্থান দিতে হবে। এজন্য CVF–V20 এখন কাজ করছে VCMI (Voluntary Carbon Markets Integrity Initiative)-এর সঙ্গে, যাতে দেশগুলো তাদের Climate Prosperity Plans-এর অংশ হিসেবে কার্বন বাজার কৌশল তৈরি করতে পারে।
VCMI-এর কার্বন বাজার প্রবেশাধিকার টুলকিট ব্যবহার করে দেশগুলো ধাপে ধাপে শিখবে—কীভাবে আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি করতে হয়, কীভাবে উচ্চমানসম্পন্ন প্রকল্প চালাতে হয়, এবং কীভাবে স্থানীয় সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষা করতে হয়।
এর আগে, মেক্সিকোর ইউকাতান অঙ্গরাজ্যে স্থানীয় জনগণের ন্যায্য অধিকার সুরক্ষায় গাইডলাইন তৈরি ও বেনিন সরকারের জন্য ১১.৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ঘাটতি চিহ্নিত করার মতো কাজ ইতোমধ্যেই করেছে VCMI।
এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে পর্যাপ্ত অর্থায়ন দেয়নি। তাই বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামোর সংস্কার দাবি করার পাশাপাশি এই দেশগুলো নিজেদের ভেতরেই সক্ষমতা তৈরি করছে, যাতে অতিরিক্ত মূলধন আকর্ষণ করা যায়।
কার্বন বাজারে কৌশলগতভাবে প্রবেশ করলে V20 দেশগুলো কেবল নিজেদের নয়, বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাও বাড়াতে পারবে।

আমাদের বেঁচে থাকা এখন এটার ওপরই নির্ভর করছে।

মোহাম্মদ নাশিদ
মালদ্বীপের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। বর্তমানে তিনি মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনের প্রতীকী ব্যক্তিত্ব।
লেখকের বক্তব্য তার নিজস্ব, আল জাজিরার সম্পাদকীয় অবস্থান নয়।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ: