নিজ দেশে সমাধান করুন; তা না হলে, যেসব প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তি সংকট তৈরি করেছিল, তাদেরই এই বোঝা বইতে দিন
তাফি মহাকা
প্রকাশ: ০০:৩৬, ২১ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৮:০৬, ২২ আগস্ট ২০২৫

৫ আগস্ট রুয়ান্ডা ঘোষণা করেছে যে তারা ট্রাম্প প্রশাসনের সম্প্রসারিত তৃতীয় দেশের বহিষ্কার কর্মসূচির আওতায় ২৫০ জন অভিবাসীকে গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছে। কিগালি থেকে সরকারপক্ষ জানায়, রুয়ান্ডা কাদের গ্রহণ করবে তা তারাই নির্ধারণ করবে। যাদের রাখা হবে, তাদের প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে যেন তারা “নতুন জীবন গড়তে পারে।”
কিন্তু এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত প্রতিশ্রুতিরই অংশ, যেখানে তিনি বলেছেন— “আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বহিষ্কার অভিযান” চালাবেন। ইতিমধ্যে আফ্রিকার আরও দুটি দেশে এরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে।
১৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম, জামাইকা, লাওস, কিউবা ও ইয়েমেন থেকে দণ্ডিত পাঁচ অপরাধীকে এসওয়াতিনিতে পাঠায়। তাদের কেউই নাগরিক নয়, নিজ দেশ ফেরত নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাই রাজধানী এমবাবানের কাছে ম্যাটসাফা কারাগারে তাদের আটকে রাখা হয়েছে।
তারও আগে, ৫ জুলাই আটজন খুন, ধর্ষণ ও ডাকাতির দায়ে দণ্ডিত পুরুষকে দক্ষিণ সুদানে পাঠানো হয়। এদের মধ্যে কেউ আসলে দক্ষিণ সুদানি কিনা তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। নাইজেরিয়াও ৩০০ ভেনেজুয়েলানকে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
আফ্রিকাকে বোঝা চাপানো অন্যায়
এ চুক্তিগুলো শুধু অমানবিক নয়, বরং সরাসরি উপনিবেশবাদকে নতুনভাবে হাজির করছে। ট্রাম্পের আগের নিষ্ঠুরতা— ২০১৯ সালে শিশুদের পরিবার থেকে আলাদা করা— ইতিমধ্যেই বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল। এখন তিনি রুয়ান্ডা, এসওয়াতিনি ও দক্ষিণ সুদানের মতো দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোকে চাপ দিচ্ছেন।
এতে আফ্রিকার প্রতি তার ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গিই প্রকাশ পাচ্ছে— যেন আফ্রিকা কেবলই “অন্ধকার” ও “অসভ্য” ভূমি। অথচ বাস্তবে আফ্রিকাই আজ সবচেয়ে বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়। শুধু উগান্ডাই ১৭ লাখ শরণার্থীকে স্থান দিয়েছে— যা যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে জাতিসংঘের নিবন্ধিত শরণার্থীর সংখ্যার থেকেও বেশি।
ইউরোপেরই উচিত তাদের দায়িত্ব নেওয়া।
ইউরোপের ঋণ পরিশোধের সময় এসেছে
ইউরোপ শতাব্দীর পর শতাব্দী আফ্রিকা থেকে সম্পদ লুট করে সমৃদ্ধ হয়েছে। থমাস পিকেটির সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯১৪ সালের মধ্যে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর বৈদেশিক সম্পদ তাদের জিডিপির ১৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল— উপনিবেশ থেকে শ্রম, সম্পদ ও কর আদায়ের কারণে।
ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস— এসব দেশ তাদের কল্যাণরাষ্ট্র গড়েছে আফ্রিকার ঘাম ও রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে। অথচ আজ তারা চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ— ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়াসহ বহু দেশে হস্তক্ষেপ করে লাখো মানুষকে উদ্বাস্তু করেছে। অথচ শরণার্থীদের দায় নিতে তারা পিছিয়ে যাচ্ছে।
আফ্রিকার অবস্থান
আফ্রিকা আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে। সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানায়। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো নিয়ম ভাঙে, যুদ্ধ চাপায়, আর তার ফল ভোগ করে আফ্রিকা।
আমরা নিজেদের ভাগ্যের ওপরই পুরো নিয়ন্ত্রণ পাই না— আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক আমাদের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ পুরোনো ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করে। তবুও আফ্রিকাকে আবারও বোঝা বইতে বলা হচ্ছে।
এ অন্যায়। এ ভণ্ডামি।
ট্রাম্পের বহিষ্কৃতদের আফ্রিকায় পাঠানো নতুন উপনিবেশবাদের রূপ। আফ্রিকার দরিদ্র রাষ্ট্রগুলো এ দায় নেবে কেন?
যারা সাম্রাজ্য গড়েছিল, যারা আজও তার সুবিধা ভোগ করছে— সেই ইউরোপীয় শক্তিগুলোকেই এই বোঝা বইতে হবে।
আফ্রিকাকে ছেড়ে দিন।
ট্রাম্পের বহিষ্কৃতদের পাঠান ইউরোপে।
তাফি মহাকা
সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক | কলামিস্ট, আল জাজিরা