সিমন ম্যাককার্থি
বেইজিংয়ে শক্তি প্রদর্শন: চীন-রাশিয়া-উত্তর কোরিয়া- ইরানের নেতাদের
প্রকাশ: ২৩:৪৫, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০০:৪৩, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত কয়েক দিন ধরে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন নেতাকে স্বাগত জানিয়ে তার এক নতুন বিশ্বব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরছেন। এবার তিনি একেবারেই ভিন্ন একটি বার্তা দিতে যাচ্ছেন। আর সে জন্য রাজধানীর প্রধান সড়ক ‘অ্যাভিনিউ অব ইটার্নাল পিস’ দখল করে আয়োজন করেছেন বিশাল এক সামরিক কুচকাওয়াজ।
বুধবার অনুষ্ঠেয় এই কুচকাওয়াজে প্রদর্শিত হবে চীনের আধুনিক হাইপারসনিক অস্ত্র, পারমাণবিক সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র, পানির নিচে চালিত ড্রোন ও হাজারো পদাতিক সেনা। শির বার্তা স্পষ্ট— চীন শুধু অর্থনৈতিক শক্তিই নয়, বরং সামরিক সামর্থ্য দিয়েও বৈশ্বিক নিয়মকানুন নতুন করে লেখার দাবি করছে, পশ্চিমকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
এক মঞ্চে ‘অ্যান্টি-আমেরিকান অক্ষ’:
এই কুচকাওয়াজে শির পাশে বসবেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ও ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান। ওয়াশিংটনের দৃষ্টিতে এই প্রথমবারের মতো একসাথে উপস্থিত হচ্ছেন ‘অ্যান্টি-আমেরিকান অক্ষ’র এই চার নেতা।
পশ্চিমা কূটনীতিকদের কাছে এই সম্মিলনের প্রতীকী তাৎপর্য তীব্র। কারণ রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধকে জিইয়ে রাখতে মস্কোকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে তেহরান ও পিয়ংইয়ং, এমনকি উত্তর কোরিয়ার সেনারাও লড়ছে। আর বেইজিং রাশিয়ার অর্থনীতিকে ভাসিয়ে রেখেছে শিল্প ও বাণিজ্যে সহায়তা দিয়ে। শি স্পষ্ট করছেন, তিনি পুতিনকে চাপ দেওয়ার সক্ষমতা রাখলেও পশ্চিমা শর্তে নয়, বরং নিজস্ব নিয়মে খেলতে চান।
আমেরিকান নীতির শূন্যতায় শির কূটনীতি:
যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি সম্প্রতি দোদুল্যমান। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ অনেক দেশকে অর্থনৈতিক চাপের মুখে ফেলেছে। এই অবস্থাকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন শি। সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) বৈঠকে তিনি ঘোষণা দেন- ‘‘কয়েকটি দেশের বানানো ‘হাউস রুলস’ গোটা বিশ্বের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।”
চীন সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে শত শত মিলিয়ন ডলারের অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সংস্কারের দাবি তুলেছে। শির ভাষায়, চীনই হলো স্থিতিশীল শক্তি, যেটি বিশৃঙ্খল বিশ্বকে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিতে পারে।
ভারতসহ নতুন সমীকরণ:
মজার ব্যাপার হলো, ভারত—যাকে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে চীনের পাল্টা ভারসাম্য হিসেবে কাজে লাগাতে চেয়েছিল, সেই ভারত সাম্প্রতিক দিনগুলোতে উল্টো চীনের সান্নিধ্যে ঝুঁকছে। পুতিন ও শির পাশে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হাসিমুখে কোলাকুলি করেছেন। অথচ এক মাস আগেই যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক চাপিয়েছে রুশ তেল কেনার কারণে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোও দীর্ঘদিন চীনের উত্থান নিয়ে সতর্ক ছিল। কিন্তু পরিবর্তিত ভূ-রাজনীতিতে তাদের অনেকের কাছেই চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এখন নতুন কৌশল হতে পারে।
বার্তা: বিকল্প বিশ্বশক্তি:
বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু কুচকাওয়াজ নয়, বরং একটি প্রতীকী বার্তা—চীন, রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মতো রাষ্ট্রগুলোকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গ্রহণযোগ্য অংশ বানানোর চেষ্টা করছে শি। পশ্চিম যতই তাদের ‘অবাধ্য রাষ্ট্র’ হিসেবে আখ্যা দিক না কেন, শি দেখাতে চাইছেন= কে ঠিক করবে বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতার মানদণ্ড।
এই প্রদর্শনীর সময়ও তাৎপর্যপূর্ণ। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত। শি ও পুতিনের দৃষ্টিতে, আজকের ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক উচ্চাভিলাষের দায় তাদের ওপর নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা জোট তাদের নিরাপত্তা উদ্বেগকে অস্বীকার করেছে বলেই এ সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে।
বৈশ্বিক মঞ্চে শি জিনপিং এখন এক নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন—যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো, পশ্চিমা ঐক্য দুর্বল করা এবং চীনকে একটি বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
বিশ্লেষণ সিএনএন। অনুবাদ সমাজকাল