রাজনৈতিক সহিংসতা আমেরিকার সমস্যা
যা সমাধান করতে পারবে কেবল শ্বেতাঙ্গ আমেরিকা
জেরেল এজেল
প্রকাশ: ১৭:৫৭, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কনজারভেটিভ কর্মী চার্লি কার্কের সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও নাড়িয়ে দিয়েছে। ইউটাহর এক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা প্রমাণ করছে যে রাজনৈতিক সহিংসতা এখন আধুনিক আমেরিকান রাজনীতির এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুটার ছিলেন ২২ বছর বয়সী এক শ্বেতাঙ্গ যুবক, মূলধারার রিপাবলিকান পরিবার থেকে আসা। কিন্তু ঘটনার পর প্রতিক্রিয়া হিসেবে যে হুমকি-ধমকি কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থী ও কলেজগুলোকে লক্ষ্য করে ছড়িয়ে পড়েছে, তা দেখাচ্ছে কত দ্রুত এ ধরনের সহিংসতা আমেরিকার জাতিগত বিভাজনকে উস্কে দিতে পারে। এ দেশের জনসংখ্যা বৈচিত্র্যময় হলেও রাজনৈতিক সহিংসতা রোধ করার ক্ষমতা মূলত শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের হাতেই রয়ে গেছে।
সাদা ডান বনাম সাদা বাম: সংখ্যালঘুরা মাঝখানে
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক লড়াই এক অর্থে সাদা ডানপন্থী ও সাদা বামপন্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। একদিকে রয়েছেন জাতীয়তাবাদী ও অভিবাসনবিরোধী ডানপন্থীরা—যেমন চার্লি কার্ক। অন্যদিকে রয়েছেন বাম উদারপন্থীরা, যারা ডানপন্থীদের ক্রমশ ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠার অভিযোগ তোলেন। আর এই সংঘাতের মাঝেই পড়ে যান কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিনো ও অন্যান্য সংখ্যালঘুরা।
কার্ক ডিইআই (Diversity, Equity and Inclusion)–বিরোধী হলেও তার বক্তব্যগুলো রাজনৈতিক আলোচনায় জটিল এক মাত্রা তৈরি করেছিল। তার দক্ষ উপস্থাপনা তরুণদের সাথে বিতর্কে বারবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। কিন্তু তার বক্তব্যে সংখ্যালঘুরা প্রায়ই প্রান্তিক চরিত্র হয়ে থাকত—কখনো হেয়প্রতিপন্ন, কখনো করুণা পাওয়ার যোগ্য।
বন্দুকনীতি ও শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য
কার্ক সবসময় অস্ত্রধারীর অধিকারের পক্ষে ছিলেন, এমনকি নিরীহ প্রাণহানিকেও স্বীকার করেছিলেন দ্বিতীয় সংশোধনীর (Second Amendment) বাস্তবতার অংশ হিসেবে। পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, শ্বেতাঙ্গ পরিবারের প্রায় ৪৯ শতাংশের কাছে অস্ত্র রয়েছে, কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারে ৩৪ শতাংশ এবং হিস্পানিক পরিবারে ২৮ শতাংশ। কিন্তু অস্ত্রের গুলিতে নিহত হওয়ার হার কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি। তারা কঠোর অস্ত্র আইন চাইলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকায় বাস্তবে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না।
ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা
গত দুই দশকে সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক উপস্থিতি বেড়েছে, তবুও ক্ষমতার মূল কেন্দ্র শ্বেতাঙ্গদের হাতেই। ট্রাম্প প্রশাসনে ১০ শতাংশেরও কম নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন সংখ্যালঘু। ৫০ জন গভর্নরের মধ্যে ৪৭ জনই শ্বেতাঙ্গ। আর কংগ্রেসে অশ্বেতাঙ্গ সদস্য সংখ্যা এখনো মাত্র ২৮ শতাংশ। ফলে নীতিনির্ধারণী ক্ষমতা এখনো শ্বেতাঙ্গ রাজনৈতিক অভিজাতদের নিয়ন্ত্রণেই।
হত্যাকাণ্ড কোনো সমাধান নয়
কার্কের মৃত্যুর পর ডানপন্থীরা তাকে স্বাধীন মতপ্রকাশের নায়ক হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে, আর বামপন্থীরা বিদ্রূপের সুরে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড আমেরিকার ইতিহাসে বহুবার ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে এনেছে—জন এফ কেনেডি, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, ম্যালকম এক্স, রবার্ট কেনেডি—সবাই সহিংসতার শিকার হয়েছেন। প্রতিটি হত্যাকাণ্ড জাতিকে সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছিল।
চার্লি কার্ক একটি নির্দিষ্ট আমেরিকার প্রতীক ছিলেন—একটি শ্বেতাঙ্গ-প্রধান আমেরিকা। তিনি স্বাধীন মতপ্রকাশের তীব্রতম রূপকে ধারণ করেছিলেন, যদিও তার মতাদর্শ ছিল গভীরভাবে বিভেদ সৃষ্টিকারী। আজকের বাস্তবতায় প্রশ্ন থেকে যায়: রাজনৈতিক সহিংসতা কমাতে হলে কি কেবল শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের হাতেই সমাধান নিহিত? কেননা সংখ্যালঘুরা এখনো সেই রাজনৈতিক শক্তি থেকে বঞ্চিত, যা দিয়ে তারা এই সহিংসতার গতিপথ পাল্টাতে পারত।
মতামতটি আলজাজিরা থেকে অনুবাদ করা হয়েছে
লেখক : জেরেল এজেল
সমাজতাত্ত্বিক ও ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো মেডিকেল সেন্টারের ভিজিটিং অধ্যাপক।
তিনি রাজনীতির জাতিগত ও সাংস্কৃতিক দিক নিয়ে গবেষণা করেন।