বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

| ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

বর্ণবাদ: ঘৃণা নয়, এক বিশ্বব্যাপী ক্ষমতা ও মুনাফার কাঠামো

প্রকাশ: ১৯:৫৪, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বর্ণবাদ: ঘৃণা নয়, এক বিশ্বব্যাপী ক্ষমতা ও মুনাফার কাঠামো

মিডিয়া রাজনৈতিক অভিজাতরা যখন বর্ণবাদী সহিংসতাকে কেবল ব্যক্তিগত ঘৃণা বা মানসিক অসুস্থতার ফল হিসেবে তুলে ধরেন, তখন তারা এর প্রকৃত রূপ আড়াল করেনযা আসলে একটি বিশ্বব্যাপী ক্ষমতা মুনাফার কাঠামো। বর্ণবাদকে শুধু ঘৃণা হিসেবে দেখলে সেটি প্রাণঘাতী হয়, এবং শেষ পর্যন্ত কেবল শাসক শ্রেণিরই উপকার করে।

 

মিনিয়াপোলিসের ঘটনা

২৩ বছর বয়সী শ্বেতাঙ্গ ট্রান্সজেন্ডার নারী রবিন ওয়েস্টম্যান ২৭ আগস্ট মিনিয়াপোলিসে একটি চার্চে গুলি চালিয়ে দুই শিশুকে হত্যা আরও ১৭ জনকে আহত করার পর আত্মহত্যা করেন। তার কাছে থেকে উদ্ধারকৃত ভিডিও নথিপত্রে ব্রেন্টন ট্যারান্ট (নিউজিল্যান্ডে ২০১৯ সালের হামলায় ৫১ জন নিহত) অ্যান্ডারস ব্রেইভিকের (নরওয়েতে ২০১১ সালের হামলায় ৮০ জন নিহত) নাম খোদাই করা কাঠের টুকরো পাওয়া গেছে।

মিডিয়ার একাংশ, বিশেষ করে নিউ ইয়র্ক পোস্ট এর কলামিস্ট ক্যারোল মার্কোভিটজ, এই ঘটনার পর ট্রান্সফোবিক এবেলিস্ট ভাষায় লিখেছেন। তিনি ওয়েস্টম্যানের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা তার লিঙ্গ পরিচয়ের মধ্যে ভিত্তিহীন সম্পর্ক টানার চেষ্টা করেছেন, যদিও এর কোনও প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।

 

ঘৃণাধারণার সীমাবদ্ধতা

আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সংবাদমাধ্যম প্রায়ই বর্ণবাদী সহিংসতাকে ঘৃণা বা উন্মাদনার ফল বলে আখ্যা দেয়। মিনিয়াপোলিসের পুলিশ প্রধান ব্রায়ান হারা বলেন, ওয়েস্টম্যান বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিঘৃণা পোষণ করত অথচ মূল সত্য হলোবর্ণবাদ মূলত ঘৃণার বিষয় নয়।

বর্ণবাদের প্রধান লক্ষ্য হলো ক্ষমতা সম্পদের উপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা। শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী সহিংসতা থেকে শুরু করে দাসপ্রথা, জিম ক্রো আইন, ভূমি দখল, রিজার্ভেশন ব্যবস্থা, আবাসন বৈষম্যসবকিছুই ছিল সুচিন্তিত নীতি। যদি জাদুর কাঠি নাড়িয়ে সবার হৃদয় থেকে ঘৃণা মুছেও ফেলা যায়, তবু চার শতকের বৈষম্যের ফলে তৈরি সম্পদ, আয়ু, সামাজিক অগ্রগতির বৈষম্য থেকে যাবে।

 

মিডিয়া কাঠামো বিশ্বব্যাপী প্রভাব

১৯৫৯ সালে দি হেইট দেট হেইট প্রোডিউসড (The Hate That Hate Produced) প্রামাণ্যচিত্রে লুই লোম্যাক্স মাইক ওয়ালেস কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদকেঘৃণার উৎপাদনহিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন, যা শ্বেত দর্শকদের জন্য সেনসেশনালিস্ট বয়ান ছিল। আজও একইভাবে সংবাদমাধ্যম বর্ণবাদকে কেবল ঘৃণা হিসেবে ফ্রেম করে।

এই কাঠামো যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ নয়। ইসরায়েলের সমালোচনাকে প্রায়ইইহুদিবিদ্বেষবলা হয়। ভারতে হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিমবিরোধী সহিংসতার বিরোধিতাকারীদেরহিন্দুভীতবলে আখ্যা দেন। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক নিপীড়ন আড়ালে চলে যায়।

বর্ণবাদকে ঘৃণা হিসেবে সীমাবদ্ধ করলে তা ব্যক্তিকেন্দ্রিক সমস্যা বলে মনে হয়। কিন্তু বর্ণবাদ আসলে এক দীর্ঘস্থায়ী বৈশ্বিক কাঠামো, যার লক্ষ্য সম্পদ ক্ষমতার উপর দখল বজায় রাখা। তাই ঘৃণা মুছে ফেলা গেলেও বর্ণবাদ শেষ হবে না, যতক্ষণ না আমরা এটিকে মুনাফা দমন-পীড়নের একটি বিশ্বব্যাপী ব্যবস্থারূপে স্বীকার করি এবং এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করি।

 

লেখক : ডোনাল্ড আর্ল কলিন্স

প্রফেসোরিয়াল লেকচারার, আমেরিকান ইউনিভার্সিটি, ওয়াশিংটন ডিসি

আলজাজিরা থেকে অনুবাদ করা

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

পুয়ের্তো রিকোর জালে মেসির আর্জেন্টিনার ৬ গোল
স্বাক্ষরবিহীন ব্যালট পেপার বিতর্কে তোলপাড়
চাকসু নির্বাচন অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়ার অভিযোগ
রোম সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস
মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে ৯ জনের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
মিরপুরের আগুন গার্মেন্টসের দ্বিতীয় তলা থেকে ৯ জনের লাশ উদ্ধার
হাসিনাকে ফেরাতে রেড নোটিশ জারির পদক্ষেপ
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ১৯ অক্টোবরের মধ্যে এনিসিপিকে প্রতীক নিতে হবে
শিশুদের জন্য বিপজ্জনক ভারতের ৩ কফ সিরাপ: ডব্লিউএইচও
বুধবার থেকে শুরু অনলাইন জামিননামা প্রক্রিয়া
শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবস্থান
আগামী রবিবার থেকে মাসব্যাপী শিশু-কিশোরদের বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকাদান শুরু