বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫

| ১২ ভাদ্র ১৪৩২

কেন পুতিন জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে রাজি নন — এবং হয়তো কোনোদিনই হবেন না

ক্লেয়ার সেবাস্টিয়ান

প্রকাশ: ০০:৩১, ২১ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৮:০৬, ২২ আগস্ট ২০২৫

কেন পুতিন জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে রাজি নন — এবং হয়তো কোনোদিনই হবেন না

হোয়াইট হাউসে সোমবার আলোচনায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের প্রসঙ্গ উঠতেই বিষয়টি বেশ সমর্থনযোগ্য বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু তারপরই এলো রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া।

ক্রেমলিনের উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ জানান, “রুশ ও ইউক্রেনীয় পক্ষের প্রতিনিধিদের স্তর উঁচু করার সুযোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।” কিন্তু তাতে কোথাও দুই প্রেসিডেন্টের নাম উল্লেখ নেই, কিংবা ইঙ্গিতও নেই যে আলোচনাটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ পরদিন রাষ্ট্রীয় টিভিতে নরম সুরে বলেন, “আমরা কোনো ধরনের আলোচনা থেকে বিরত নই – দ্বিপাক্ষিক হোক বা ত্রিপাক্ষিক। তবে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক হলে তা সর্বাধিক সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুত করতে হবে।” ক্রেমলিন ভাষায় এর মানে হলো—এখনো তারা কোনোভাবেই প্রস্তুত নয়।

যুদ্ধ, মতাদর্শ ও বৈঠকের অচলাবস্থা
এটি সেই যুদ্ধ, যা পুতিন শুরু করেছিলেন ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন স্বীকৃতি দিয়ে। তার মতে, ইউক্রেন হলো রাশিয়ার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিক পরিসরের অবিচ্ছেদ্য অংশ—এবং ইউক্রেনের স্বাধীনতা এক ঐতিহাসিক ভুল।

চ্যাথাম হাউসের ওরিসিয়া লুতসেভিচ বলেন, যদি বৈঠক হয়ও, তবে পুতিনকে স্বীকার করতে হবে যে তিনি এমন এক রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বসছেন, যাকে তিনি ‘রসিকতা’ বলে উড়িয়ে দেন এবং যিনি এমন এক দেশের নেতা, যেটি তিনি অস্তিত্বহীন মনে করেন।

রুশ রাষ্ট্রীয় প্রচারণায় জেলেনস্কিকে দীর্ঘদিন ধরে “নাৎসি”, “পশ্চিমাদের ক্রীড়নক” এবং “অবৈধ” বলা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে হঠাৎ বৈঠকে বসা রুশ জনগণকে বোঝানো কঠিন। এ ছাড়া রাশিয়া সম্প্রতি তথাকথিত ‘শান্তি প্রস্তাবে’ ইউক্রেনকে নির্বাচন আয়োজনের শর্ত দিয়েছে, যা যুদ্ধাবস্থায় কার্যত অসম্ভব। পুতিন সচরাচর জেলেনস্কির নাম উচ্চারণ করেন না; বরং বলেন “কিয়েভ শাসন।”

যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ও ট্রাম্পের চাপ
কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের ফেলো তাতিয়ানা স্তানোভায়ার মতে, পুতিনের কাছে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক যুদ্ধের জন্য জরুরি নয়, কারণ এটি মূলত রাশিয়া বনাম পশ্চিমাদের সংঘাত। তবে শর্ত মেনে চললে তিনি বৈঠকে যেতে পারেন। তার মূল দাবি হলো—ইউক্রেনকে দখলকৃত ভূমি ছাড় দিতে হবে। জেলেনস্কি ইতিমধ্যেই সেটি নাকচ করেছেন।

পুতিন বিশ্বাস করেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই কিয়েভকে চাপ দিয়ে রাশিয়ার দাবিগুলোর প্রতি নমনীয় হতে বাধ্য করতে পারেন। উশাকভের প্রস্তাব অনুসারে রাশিয়া হয়তো আবার ইস্তাম্বুলে উচ্চপর্যায়ের আলোচনার ইঙ্গিত দেবে—যেখানে লাভরভ বা উশাকভ নিজেই থাকবেন—কিন্তু পুতিন জেলেনস্কির মুখোমুখি হয়ে ব্যর্থ আলোচনায় ‘অ্যামবুশে’ পড়তে চাইবেন না।

ট্রাম্প অবশ্য নিজের সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন যে তিনি বৈঠকের আয়োজন শুরু করেছেন। কিন্তু পরদিনই তিনি ফক্স নিউজে বলেন, “আমি সেটআপ করলাম, কিন্তু শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিতে হবে ওদেরকেই। আমরা তো ৭,০০০ মাইল দূরে।”

পুতিনের প্রাপ্তি বনাম ছাড়
পুতিন এখনো কোনো ছাড় না দিয়েই অনেক কিছু অর্জন করেছেন—আলাস্কায় এক মহাসম্মেলনে আমন্ত্রণ, যুদ্ধবিরতির শর্ত প্রত্যাহার, এমনকি কার্যত সব নিষেধাজ্ঞার চাপ কমে যাওয়া। আগস্টে ড্রোন হামলার মাত্রা সামান্য কমালেও সোমবার রাতে আবার ২৭০ ড্রোন ও ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে রাশিয়া।
অতএব পুতিনের বৈঠকে রাজি হওয়ার কারণ এখনো নেই। যদি ট্রাম্পের চাপ জেলেনস্কিকে নরম না করে, তবে মস্কোর হাতে রয়েছে আরও সহজ হাতিয়ার—সামরিক শক্তি।
এখন একমাত্র অনিশ্চিত ব্যাপার হলো—এই উদ্যোগ ব্যর্থ হলে ট্রাম্প দোষ চাপাবেন কাদের ঘাড়ে।

সিএনএনের বিশ্লেষন
অনুবাদ : সমাজকাল

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ: