বাঙালি নিয়ে তসলিমা নাসরিন ও জাভেদ আখতারের বাহাস
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২০:১৫, ১ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০১:১১, ২ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশি নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিনের সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। দুর্গাপূজার অষ্টমীর সকালে তিনি এক পোস্টে দাবি করেন, বাঙালি সংস্কৃতির মূলভিত্তি হলো হিন্দু সংস্কৃতি, এমনকি মুসলিম বাঙালিরাও সেই ঐতিহ্যের অংশ। এই মন্তব্যের জবাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ভারতের বিশিষ্ট গীতিকার ও কবি জাভেদ আখতার।
তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, “লুকানোর কিছু নেই: হিন্দু সংস্কৃতিই বাঙালি সংস্কৃতির ভিত্তি। আমরা বাঙালি—যেই ধর্ম বা দর্শনই গ্রহণ করি না কেন—জাতিগতভাবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম কিংবা নাস্তিক—সবার পূর্বপুরুষ ছিলেন ভারতীয় হিন্দু।”
তিনি আরও দাবি করেন, মুসলিম বাঙালির সংস্কৃতি আরবীয় নয়, বরং তা বাঙালি পরিচয়ের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। ঢাক-ঢোল, গান, নাচ—এসবই বাঙালি সংস্কৃতির মৌলিক প্রকাশভঙ্গি।
জাভেদ আখতার নাসরিনের বক্তব্যকে আংশিক সমর্থন করলেও ‘গঙ্গা-জমুনি আবাদি সংস্কৃতির’ গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন,“আমরা আওধ অঞ্চলের মানুষরা বাঙালি সংস্কৃতি, ভাষা ও সাহিত্যকে গভীর শ্রদ্ধা করি। তবে যদি কেউ গঙ্গা-জমুনি তেহজিবের সূক্ষ্মতা ও পরিশীলনকে বুঝতে না পারে, তবে সেটি তারই ক্ষতি। এই সংস্কৃতির সঙ্গে আরবের কোনো সম্পর্ক নেই।”
আখতার আরও জানান, ভারতীয় সংস্কৃতিতে পারস্য ও মধ্য এশীয় প্রভাব যেমন প্রবাহিত হয়েছে, তেমনি পশ্চিমা প্রভাবও এসেছে, তবে সবকিছু ভারতীয় শর্তেই গ্রহণ করা হয়েছে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক বাঙালি উপাধি বা পদবিই আসলে পারস্য-উৎপত্তি।
দুর্গাপূজার সময়ে তসলিমা নাসরিনের এই বক্তব্য আবারও তার পুরনো বিতর্ককে সামনে এনেছে। ইসলামি রক্ষণশীলদের সমালোচনা করা এবং বাঙালি সংস্কৃতিকে হিন্দু ঐতিহ্যের শিকড়ে টেনে নেওয়া তার লেখনীর একটি বড় বৈশিষ্ট্য। অন্যদিকে, জাভেদ আখতার বরাবরই ভারতের বহুত্ববাদী সংস্কৃতির রক্ষক হিসেবে পরিচিত।
এই বিতর্ক দক্ষিণ এশিয়ার সাংস্কৃতিক পরিচয় ও ইতিহাস ঘিরে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের বাঙালি সমাজে ধর্ম, জাতিসত্তা ও সংস্কৃতির সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক যে এখনো প্রাসঙ্গিক, তা এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল।
খবর: এনডিটিভি