‘কথার জাদুকর’ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮:৪৬, ১০ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০০:৩১, ১১ অক্টোবর ২০২৫

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। ফাইল ছবি
অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতিবিদ। রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতির যেকেোনো সঙ্কটে তিনি ছিলেন সোচ্চার। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। নানাবিধ সঙ্কটের মধ্যেও মানুষকে বেঁচে থাকার আশা জোগাতেন। দেশ ও মানুষকে দেখাতেন আলোর পথ। সৃজনশীল সাহিত্যকর্ম ও শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে তিনি।
রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকেল ৫টায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন দেশের এই বরেণ্য মানুষ। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
জন্ম সিলেট শহরে
সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের জন্ম ১৮ জানুয়ারি ১৯৫১ সালে, সিলেট শহরে একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তার বাবা সৈয়দ আমীরুল ইসলাম এবং মা রাবেয়া খাতুন।
তিনি সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক ও ১৯৬৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন সিলেট এমসি কলেজ থেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন ১৯৭১ ও ১৯৭২ সালে। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইয়েটস-এর কবিতায় ইমানুয়েল সুইডেনবার্গের দর্শনের প্রভাব বিষয়ে পিএইচডি করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা শেষে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে যোগ দেন। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন।
সাহিত্যকর্মে মানবিক মূল্যবোধ
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম শিক্ষকতার পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি করেছেন। তার সাহিত্যকর্মে ফুটে উঠেছে মানবিক মূল্যবোধ, সমাজের জটিলতা ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ।
তার গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে—স্বনিরবাচিত শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৯৪), থাকা না থাকার গল্প (১৯৯৫), কাচ ভাঙ্গা রাতের গল্প (১৯৯৮), অন্ধকার ও আলো দেখার গল্প (২০০১), প্রেম ও প্রার্থনার গল্প (২০০৫), সুখদুঃখের গল্প ও বেলা অবেলার গল্প।
উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে—আধখানা মানুষ্য (২০০৬), দিনরাত্রিগুলি, আজগুবি রাত, তিন পর্বের জীবন, যোগাযোগের গভীর সমস্যা নিয়ে কয়েকজন একা একা লোক (ব্রাত্য রাইসু সহযোগে) ও কানাগলির মানুষেরা।
প্রবন্ধ ও গবেষণাগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে—নন্দনতত্ত্ব (১৯৮৬), কতিপয় প্রবন্ধ (১৯৯২), অলস দিনের হাওয়া, মোহাম্মদ কিবরিয়া (সুবীর চৌধুরীর সহযোগে) এবং রবীন্দ্রানাথের জ্যামিতি ও অন্যান্য শিল্পপ্রসঙ্গ।
পুরস্কার ও সম্মাননা
মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কাজী নজরুল ইসলাম ও শামসুর রাহমানের ওপর তার উল্লেখযোগ্য গবেষণা কর্ম রয়েছে। সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৬), একুশে পদক (২০১৮), প্রথম আলো বর্ষসেরা বই পুরস্কার (২০০৫) ও কাগজ সাহিত্য পুরস্কার (২০০৬)।