সেতুর টোল আদায়ে অনিয়ম
শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদন দুদকের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭:৫৫, ১২ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২২:৫৩, ১২ অক্টোবর ২০২৫

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়ের কার্যাদেশে অনিয়ম, সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রবিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) তানজির আহমেদ।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে সেতুর টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) লিমিটেডকে নিয়োগ দিতে গিয়ে আগের দরপত্র ‘ইচ্ছাকৃতভাবে বাতিল’ করা হয়। এরপর সরারসি ক্রয় পদ্ধতিতে শুধু সিএনএস লিমিটেডের সঙ্গে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এই চুক্তিতে টোল আদায়ের সার্ভিস চার্জ নির্দিষ্ট না করে আদায়ের শতকরা ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে পরিশোধের শর্ত বেঁধে দেওয়া হয় (ভ্যাট ও আয়কর ব্যতীত)।
তদন্তে দেখা যায়, সিএনএস লিমিটেড এই মেয়াদে ৪৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বিল নেয়। অথচ একই কাজ ২০১০-১৫ মেয়াদে অন্য প্রতিষ্ঠান এমবিইএল-এটিটি মাত্র ১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় করেছিল। পরবর্তী সময়ে ২০২২-২৫ মেয়াদে ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ৬৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় (ভ্যাট ও আয়করসহ) একই কাজের কার্যাদেশ পায়—যা পাঁচ বছরে প্রায় ১১২ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। সিএনএস লিমিটেড ‘নতুন প্রযুক্তি স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়ন’ বাবদ অতিরিক্ত ৬৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা দাবি করে, যার কোনো যৌক্তিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি।ফলে সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩০৯ কোটি ৪২ লাখ ৪৫ হাজার ৮৯০ টাকা।
দুদক অনুমোদিত মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক প্রধানমনন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী (অর্থ ও পরিকল্পনা) এম এ মান্নান, সাবেক সচিব এম এ এন ছিদ্দিক, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফারুক জলিল, সাবেক উপসচিব মোহাম্মদ শফিকুল করিম, ফিরোজ ইকবাল ও ইবনে আলম হাসান, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আফতাব হোসেন খান ও আব্দুস সালাম, এমডি, সিএনএস লিমিটেড মুনীর উজ জামান চৌধুরী, সেলিনা চৌধুরী ও ইকরাম ইকবাল, পরিচালক, সিএনএস লিমিটেড।
দুদক জানিয়েছে, সরকারকে আর্থিকভাবে বিপুল ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তিগত স্বার্থে চুক্তি প্রদান ও অনুমোদনের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ শেষে মামলাটি দ্রুত আদালতে দাখিল করা হবে।