বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

| ১ কার্তিক ১৪৩২

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের চতুর্থ দিনের যুক্তিতর্ক চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪:৪৬, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের চতুর্থ দিনের যুক্তিতর্ক চলছে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আজ চতুর্থ দিনের মতো রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক চলছে।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন।

গত ১২ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয়। প্রথম দিনে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের নানা দিক তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর, যেখানে গুম-খুনের ঘটনাবলি ও দমননীতি নিয়ে বিশদ বিবরণ দেন তিনি।

পরদিন ১৩ অক্টোবর দ্বিতীয় দিনের যুক্তিতর্কে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে বেশ কিছু প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপন করে, যা মামলার প্রমাণ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানানো হয়।

তৃতীয় দিনে, ১৪ অক্টোবর, উপস্থাপন করা হয় জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময়কার তথ্যচিত্র, শেখ হাসিনার সঙ্গে হাসানুল হক ইনু ও শেখ ফজলে নূর তাপসের কথোপকথনের রেকর্ডিং এবং বেশ কিছু সাক্ষ্যবিবরণ।

৮ অক্টোবর শেষ হয় সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা পর্ব। এ মামলায় মোট ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর, যাকে শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন তিন দিন ধরে জেরা করেন।

তিনি সাক্ষীর বক্তব্যের বিরোধিতা করে যুক্তি দেন যে, আন্দোলনকারীদের সহিংস আচরণের কারণেই পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছিল।
মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হিসেবে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, এবং শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তীসহ কয়েকজন সাক্ষ্য দেন।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেকর্ড শাখার দুই কর্মকর্তা কামরুল হোসাইন ও আনিসুর রহমান জব্দতালিকা সাক্ষী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দেন।
গত ১০ জুলাই সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন আদালতে মানবতাবিরোধী অপরাধে নিজের দায় স্বীকার করে বলেন,“জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে যে হত্যা-গণহত্যার অভিযোগ এসেছে, তা সত্য। আমি রাজসাক্ষী হয়ে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।”

এই স্বীকারোক্তির পর ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে। মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগের মোট আয়তন ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠা, যার মধ্যে—তথ্যসূত্র: ২,০১৮ পৃষ্ঠা,জব্দতালিকা ও প্রমাণাদি: ৪,০০৫ পৃষ্ঠা,শহীদদের তালিকা: ২,৭২৪ পৃষ্ঠা।

রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে, যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর রায় ঘোষণার পর্যায়ে যেতে প্রস্তুতি চলছে।

আরও পড়ুন