ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচারের শেষ ধাপ সরাসরি সম্প্রচার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪:১৩, ১২ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৪:৩৮, ১২ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই–আগস্ট অভ্যুত্থানের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার শেষ ধাপের শুনানি শুরু হয়েছে। রবিবার (১২ অক্টোবর) থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ প্রসিকিউশনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ ধাপের শুনানি সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে, যা দেশের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
প্রসিকিউটর গাজী এম.এইচ. তামীম শনিবার (১১ অক্টোবর) জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব সম্পন্ন হয়েছে। আইন অনুযায়ী প্রথমে প্রসিকিউশন পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন, এরপর আসামি পক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন হবে। এটি মামলার চূড়ান্ত ধাপ, যার পর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান থাকবে।
মামলার শেষ সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের জেরা সম্পন্ন হয় গত বৃহস্পতিবার। ২৮ কার্যদিবসে মোট ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এ পর্ব শেষ হয়।
প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, “আমরা ৫৪ জন সাক্ষীর মাধ্যমে যথেষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করেছি, যা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হবে।”
অন্যদিকে আসামিপক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন বলেন, “সাক্ষীদের জবানবন্দি বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট বোঝা যায়, আমার আসামিরা নির্দোষ। আমরা আইনি প্রমাণের মাধ্যমে তা আদালতে তুলে ধরব।”
এই মামলার তিন আসামির মধ্যে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন, যা মামলার গতিপথে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রথমে মামলার তদন্ত পরিচালনা করেন তদন্ত সংস্থার উপ-পরিচালক মো. জানে আলম খান। পরে দায়িত্ব পান উপ-পরিচালক মো. আলমগীর, যিনি ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ৩১ মে সম্পূরক অভিযোগ দাখিল এবং ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপনের পর ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করা হয়।
এই বিচার প্রক্রিয়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা চলমান থাকায় দেশি–বিদেশি সংবাদমাধ্যম ও পর্যবেক্ষক মহল নজর রাখছে প্রতিটি ধাপে।
বিশেষ করে সরাসরি সম্প্রচারের ফলে সাধারণ মানুষও এ প্রক্রিয়ার সাক্ষী হচ্ছে, যা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব অধ্যায়।