চানখারপুলে ৬ হত্যা মামলায় চাঞ্চল্যকর জবানবন্দি
শেখ হাসিনাসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যা বললেন আসিফ মাহমুদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০:০০, ৯ অক্টোবর ২০২৫

রাজধানীর চানখারপুলে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছয়জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার মামলায় আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন স্থানীয় সরকার ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তার জবানবন্দিতে উঠে এসেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রশাসনের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের গুরুতর অভিযোগ।
আসিফ মাহমুদ তার জবানবন্দিতে বলেন, “২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আমি নিজে রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় উপস্থিত ছিলাম। আমার সামনেই পুলিশের গুলিতে দুইজন নিহত হন। পরে জানতে পারি মোট ছয়জন ছাত্র-আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।”
তিনি দাবি করেন, গুলিবর্ষণে ব্যবহৃত হয় চাইনিজ রাইফেল ও শর্টগান, যা পুলিশ সদস্যরা সরাসরি চালায়। আসিফের বক্তব্য অনুযায়ী, “এই হত্যাকাণ্ড ছিল পরিকল্পিত। পুলিশ ও তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ শেখ হাসিনা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে তা পরিচালনা করে।”
আসিফ মাহমুদ জানান, তিনি ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ছাত্রসমাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আন্দোলনের শেষ দিকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়।
তিনি বলেন, “ডিবি কার্যালয়ে আটক অবস্থায় আমাদের বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে আমাদের আনা হয়েছে। আন্দোলন বন্ধ না করলে হত্যার নির্দেশ রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “ডিবির কিছু কর্মকর্তা মানবিক আচরণ করেছিলেন; তাদের দয়ার কারণেই আমরা বেঁচে গেছি।”
চানখারপুল হত্যাকাণ্ডের দিন দুপুর দেড়টার দিকে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন বলে দাবি করেন সাক্ষী আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, “সেদিনই জানতে পারি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। তারপর থেকেই প্রশাসনে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা শুরু হয়।”
জবানবন্দিতে আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, আন্দোলনের সময় তাকে একাধিকবার গুম ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। “এক পর্যায়ে আমার ফোন ট্র্যাক করে ডিবি ও ডিজিএফআই সদস্যরা আমাকে তুলে নেয়। চোখ বাঁধা অবস্থায় পাঁচ দিন আটক ছিলাম।”
তিনি জানান, পরে একটি গোপন স্থানে নিয়ে গিয়ে আন্দোলন ত্যাগের শর্তে প্রাণ রক্ষা করা হয়। “পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আয়নাঘর পরিদর্শনের সময় আমি সেই একই ঘর চিহ্নিত করি যেখানে আটক ছিলাম,”—যোগ করেন তিনি।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজকের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে শুনানি মুলতবি ঘোষণা করে ১৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে আসিফ মাহমুদের অবশিষ্ট সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামীমসহ অন্যান্য প্রসিকিউটর। আসামিপক্ষে আইনজীবীরাও এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এই মামলায় ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন পলাতক ও চারজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে তৎকালীন সরকার, দলীয় ক্যাডার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল।