দিল্লি বিস্ফোরণ তদন্তে আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ স্থানে তল্লাশি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪:৪৫, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
দিল্লি বিস্ফোরণ মামলার তদন্তে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) মঙ্গলবার ভোরে হরিয়ানাভিত্তিক আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত ২৫টি স্থানে একযোগে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফরিদাবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ একরের প্রধান ক্যাম্পাস ছাড়াও দিল্লির ওখলা অফিসেও অভিযান চালানো হয়েছে। বিস্ফোরণ মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত তিনজন চিকিৎসক সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পরই প্রতিষ্ঠানটি নজরদারির কেন্দ্রে আসে।
সরকারের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক লেনদেন খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যে ফরেনসিক অডিট শুরু হয়েছে। পাশাপাশি দিল্লি পুলিশের ইকনমিক অফেন্সেস উইং বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল ব্যবহারে অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগে পৃথক তদন্ত পরিচালনা করছে। বিস্ফোরণ মামলাটি তদন্ত করছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)।
ইউজিসি ও এনএএসি–এর স্বীকৃতি সংক্রান্ত নথিতে অসঙ্গতি ও জালিয়াতির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই ইন্ডিয়ান ইউনিভার্সিটিজ অ্যাসোসিয়েশন তাদের সদস্যপদ স্থগিত করে জানায়, প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান অবস্থা “উদ্বেগজনক”।
ফরিদাবাদ এলাকায় ব্যাপক বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয় ঘন আলোচনায় আসে। তদন্ত সূত্রে জানা যায়—
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত চিকিৎসক মুজাম্মিলের ভাড়া বাসা থেকে প্রায় ২৯০০ কেজি বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার হয়।
অন্য চিকিৎসক ড. শাহিনের গাড়ি থেকে অ্যাসল্ট রাইফেলসহ বিভিন্ন অস্ত্র জব্দের পর তাকে আটক করা হয়।
এরপরই দিল্লির লালকেল্লার কাছে একটি গাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১৩ জন নিহত এবং ২০ জনের বেশি আহত হন। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন ড. উমর, তিনিও আল-ফালাহের কর্মী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর (ড.) ভূপিন্দর কৌর আনন্দ এক বিবৃতিতে বলেন—“ঘটনা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও অস্বস্তিকর। যেসব দুই-তিনজন কর্মীকে আটক করা হয়েছে, তারা শুধু চাকরির ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাদের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের দায় প্রতিষ্ঠান নেবে না।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়—“কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। এগুলো আমাদের সুনাম নষ্টের উদ্দেশ্যে প্রচার করা হচ্ছে।”
আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০১৫ সালে ইউজিসির স্বীকৃতি পায়। আল-ফালাহ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটিতে চিকিৎসাবিজ্ঞান, প্রকৌশল, মানবিক ও কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়াশোনা করানো হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনার পর তাদের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং তদারকি প্রক্রিয়া নিয়ে চরম প্রশ্ন উঠেছে।
তদন্ত সংস্থাগুলোর ধারাবাহিক তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক লেনদেন, কর্মচারী নিয়োগ ও গবেষণা কার্যক্রম নিয়ে আরও কঠোর অনুসন্ধান চলছে। দেশের অন্যতম আলোচিত এ বিস্ফোরণ মামলায় আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয় এখন ভারতের তদন্ত সংস্থাগুলোর নজরে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দু।
