টেলিগ্রাফের সম্পাদকীয়
নয়াদিল্লি–ঢাকা সম্পর্কে নতুন ঝুঁকির ইঙ্গিত
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩:২৭, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
নয়াদিল্লি–ঢাকা সম্পর্কে নতুন ঝুঁকির ইঙ্গিত। ছবি: সংগৃহীত
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারের রায়কে কেন্দ্র করে ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ এক সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। শিরোনাম— “গ্রে জাস্টিস: বাংলাদেশ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড”।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই রায় এক সময়কার শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় নিঃসন্দেহে একটি তাৎপর্যের মুহূর্ত। তবে একই সঙ্গে বিচারপ্রক্রিয়ার ধরণ, রায়ের পূর্বানুমেয়তা এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া—সবকিছুই বিচারপ্রত্যাশী বিপুল জনগোষ্ঠীর আস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। পাশাপাশি, নয়াদিল্লি–ঢাকা সম্পর্কের আগে থেকেই উত্তেজনাপূর্ণ প্রেক্ষাপটে এটি নতুন জটিলতা তৈরি করার আশঙ্কাও সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্পাদকীয় বলছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত ছাত্রসহ বিরোধীদের হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, অথচ তিনি বিচারকালীন সময়ে উপস্থিত ছিলেন না। ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতা হারানোর পর তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তার আইনি লড়াইও ছিল বেশ দুর্বল। ফলে রায়টি কী হবে—তা অনেকটাই অনুমান করা সম্ভব ছিল। প্রমাণের শক্তি যাই হোক, পুরো বিচারক্রিয়াকে অনেকের কাছে একটি ‘পূর্বনির্ধারিত প্রদর্শনীমূলক বিচার’ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
সমালোচনার আরেকটি জায়গা হলো রায় ঘোষণার পর বাংলাদেশ সরকারের প্রতিক্রিয়া। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের কাছে শেখ হাসিনার ফেরত দাবি করলেও সেই আবেদনটির সঙ্গে হুঁশিয়ারিও যুক্ত করেছে—‘দ্রুত প্রত্যর্পণ না হলে’ তা ঢাকার দৃষ্টিতে ‘অবন্ধুসুলভ’ আচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
অন্যদিকে ভারতের প্রতিক্রিয়া এসেছে অনেকটাই পরিমিত সুরে। দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে—ভারত বাংলাদেশের ‘মঙ্গলকামী’, এবং আলোচনা করতে প্রস্তুত। কিন্তু টেলিগ্রাফ বিশ্লেষণে বলছে, শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে ভারত প্রকাশ্যে কড়া ভাষা ব্যবহার করবে—এমনটা ভাবার কারণ নেই। প্রয়োজনে নীরব ও আড়ালের কূটনীতিই তাদের সবচেয়ে বাস্তবসম্মত পথ।
সম্পাদকীয়টির মূল বার্তা—দুই দেশের সম্পর্ককে একজন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে আটকে রাখা ঠিক হবে না। শেখ হাসিনা বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও নয়াদিল্লি ও ঢাকা—উভয়কেই পারস্পরিক সমঝোতার জায়গা খুঁজে নিতে হবে। ভবিষ্যৎ সহযোগিতা অনেকটাই নির্ভর করছে এই ভিন্নমতকে কতটা দক্ষভাবে সামাল দেওয়া যায়, তার ওপর।
