ইউক্রেনকে ১০০ রাফায়েল যুদ্ধবিমান দিচ্ছে ফ্রান্স
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯:৪৮, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
ফ্রান্স ইউক্রেনকে সহায়তা দিতে যে নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে, তা দুই দেশের সম্পর্কের গতিপথই বদলে দিতে পারে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ফ্রান্সের ভিল্লাকুব্লে শহরের সামরিক বিমানবন্দরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায় আগামী দশ বছরে কিয়েভ পাবে একশটিরও বেশি রাফায়েল যুদ্ধবিমান, অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, গোলাবারুদ এবং ড্রোন। রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে এ সিদ্ধান্তকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর জেলেনস্কি সরাসরি বললেন, ইউক্রেন এখন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী একটি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম পেতে চলেছে। রাশিয়া যে গত কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনের ওপর শত শত গ্লাইড বোমা নিক্ষেপ করছে—এ অবস্থায় শক্তিশালী যুদ্ধবিমান ও দূরপাল্লার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালো হয়ে উঠেছিল। ইউক্রেনীয় সামরিক বিশ্লেষক সেরহি কুজহান বিবিসিকে জানান, ফ্রান্স যে নতুন এয়ার ডিফেন্স দিচ্ছে তার রেঞ্জ ২০০ কিলোমিটার—যেখানে রাশিয়ার ব্যবহৃত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার রেঞ্জ ২৩০ কিলোমিটার। অর্থাৎ রকেট, বোমা কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র সেই সীমার ভেতরে আসলেই তা আঘাত হানার আগেই ধ্বংস করা সম্ভব হবে।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের দপ্তর এলিসি প্রাসাদের বিবৃতিতে এই চুক্তিকে কেবল সামরিক সরঞ্জাম কেনাবেচার চুক্তি হিসেবে দেখা হয়নি। এটি পশ্চিমা রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির একটি অংশ, যেখানে রাশিয়ার ফ্রিজ করা সম্পদ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যবহার করার পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ম্যাক্রোঁ বলেন, ইউক্রেনকে ১০০ রাফায়েল দেওয়ার পরিকল্পনা সত্যিই বড় এবং তা ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে আরও সমন্বিত ও শক্তিশালী করে তুলবে।
রাফায়েল যুদ্ধবিমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও আধুনিক যুদ্ধবিমানগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত। ঘণ্টায় ৩ হাজার ৭০০ কিলোমিটার সর্বোচ্চ গতি, ৫০ হাজার ফুট পর্যন্ত উড্ডয়ন ক্ষমতা, একযোগে একাধিক পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সক্ষমতা এবং ভারী মেশিনগানসহ নানা আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত এই পঞ্চম প্রজন্মের বিমানকে আধুনিক আকাশযুদ্ধের ‘গেম চেঞ্জার’ বলা হয়। ঝাপোরিজ্জিয়াসহ পূর্বাঞ্চলের কঠিন যুদ্ধপরিস্থিতিতে এই বিমান ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনের কৌশলগত অবস্থানে বড় পরিবর্তন আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
রাশিয়ার তীব্র হামলা এবং ইউক্রেনের প্রতিরোধ—এই দুইয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ফ্রান্সের এমন এক সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে ইউরোপ ভবিষ্যৎ ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় আরো সক্রিয় ভূমিকা নিতে যাচ্ছে।
সূত্র: রয়টার্স
